পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 একবার স্যাণ্ডো আমেরিকা গিয়াছিলেন। সেখানে অনেক বড় বড় শহরে তামাশা দেখাইয়া লোককে আশ্চর্যাম্বিত করেন। কিন্তু সকলের চাইতে আশ্চর্য কাণ্ড হইয়াছিল, সানফ্রানসিস্কো নগরে, এক সিংহের সহিত তাঁহার যুদ্ধ।

 একটা প্রকাণ্ড সার্কাসে সিংহ এবং ভালুকের যুদ্ধ হইবে বলিয়া বিজ্ঞাপন দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু দুইটা পশুকে এরূপ করিয়া ছেঁড়া ছিঁড়ি রক্তরক্তি করান আইনবিরুদ্ধ বলিয়া, পুলিসের লোক তাহা হইতে দিল না, অনেক লোক উৎসুক হইয়া টিকিট কিনিয়াছিল;তামাসা হইল না বলিয়া, তাহারা একটু নিরাশ হইল। তখন স্যাণ্ডো বলিলেন, “আমি ঐ সিংহের সঙ্গে যুদ্ধ করিব!” সিংহটা ছয় মণ ভারী। স্বভাবটি তার সিংহের পক্ষেও একটু একটু বেশী রকম হিংস্র। দিন সাতেক আগে তাহার রক্ষকটিকে জলযোগ করিয়াছে। স্যাণ্ডো বলিলেন, “এই সিংহের সহিত যুদ্ধ করিব!”

 সিংহের সঙ্গে খালি বলেরই পরীক্ষা। সিংহ নখ দিয়া আঁচড়াইবে, দাত দিয়া কামড়াইবে। মানুষের ত আর তেমন নখ দাঁত নাই; সুতরাং একটা ছোরা বা অন্য কোনরকম অস্ত্র না হইলে কিরূপে আত্মরক্ষা হয়? কিন্তু অস্ত্র দিয়া পশুকে খোঁচাইলে নিষ্ঠুরতা হইবে; সুতরাং পুলিশ এ কথায় বাধা দিল। তখন অগত্যা ইহাই স্থির হইল যে, সিংহকে মুখোশ আর মোজা পরাইয়া দেওয়া হইবে। খালি গায়ের জোরের পরীক্ষা।

 ইহাতেও স্যাণ্ডোর বন্ধুরা কহিতে লাগিলেন, “সিংহের এত জোর, যে এক চড় মারিয়া তোমার মাথা ছিড়িয়া ফেলিতে পারে।” যাহা হউক স্যাণ্ডো লড়িবেনই। দেশময় হুলস্থল পড়িয়া গেল।

 যে তাবুতে তামাসা দেখান হয়, তাহাতে কুড়িহাজার লোক ধরে। এত লোকের সামনে তামাসা দেখাইতে হইলে, আগে একটু প্রস্তুত হইয়া লওয়াই দরকার। সুতরাং তামাসার আগে একদিন গোপনে সিংহের সহিত পরিচয় করিয়া লওয়ার ব্যবস্থা হইল।

 অনেক লোক মিলিয়া, শিকল দিয়া বাধিয়া, সিংহ মহাশয়কে মোজা আর মুখোশ পরাইয়া দিল। সিংহ বিস্তর আপত্তি করিয়াছিল, সুতরাং তাহাকে এসকল পরাইতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগিল।

 যে খাচায় লড়াই হইবে তাহা সত্তর ফুট লম্বা। লোকজন অতি অল্পই ছিল;কিন্তু যাহারা ছিল, তাহারা মনে করে নাই যে, স্যাণ্ডো এই খাঁচার ভিতরে ঢুকিয়া আবার বাহির হইয়া আসিবেন। খালি হাতে খালি গায়ে স্যাণ্ডো খাচার ভিতরে প্রবেশ করিলেন। স্যাণ্ডোকে দেখিয়া সিংহ ভয়ানক রাগের সহিত লাফাইয়া তাঁহার ঘাড়ে পড়িতে গেল। কিন্তু স্যাণ্ডো হঠাৎ পাশ কাটাইয়া যাওয়াতে তাহ পারিল না। স্যাণ্ডো আর তাহাকে মাটিতে পড়িয়া আশ্চর্য হইবার অবসর দিলেন না। একহাতে গলা আর এক হাতে কোমর জড়াইয়া ধরিয়া তাহাকে কাধের সমান উচুতে তুলিলেন;তারপর আছড়াইয়া মেঝেতে ফেলিয়া দিলেন। এমন ব্যবহারে সিংহের রাগ হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক তাতে সেই সিংহটা আবার ভয়ানক রাগী। সে এমনি এক চড় উঠাইল, যে স্যাণ্ডো মাথা সরাইয়া না ফেলিলে, হয়ত তাহা গুড়াইয়া যাইত। কিন্তু স্যাণ্ডো তাড়াতাড়ি মাথা সরাইয়া লইয়া, তাহাকে আবার সাপটাইয়া ধরিলেন। সিংহের তখন প্রায় কলে ইঁদুর পড়ার গোছ হইল। সে কত চেষ্টা করিল, কিছুতেই স্যাণ্ডোর হাত ছাড়াইয়া যাইতে পারিল না। তারপর স্যাণ্ডো নিজেই তাহাকে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিলেন।