পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯১১
হাফটোন্-ছবি

 ফটোগ্রাফীর সাহায্যে পুস্তকাদিতে ছাপিবার জন্য ছবি খোদাই হইবার কথা অনেকেই জানেন। হাঙ্গ্টোন্ নামক যে সকল ছবি আজকাল দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা এই প্রণালীতে খোদিত।

 কোন জিনিসের ছবি তুলিতে হইলে ফটোওয়ালারা তাহার সামনে ক্যামেরা স্থাপন করিয়া কত প্রকারের কসরৎ করে তাহা সকলেই দেখিয়াছে। ক্যামেরার ভিতরে যে তখনই বা করিয়া একটা জিনিসের ছবি আঁকা হইয়া যায়, তাহা কিন্তু নহে। ক্যামেরার ভিতরে একখানা মসলা মাখান কাচে সামনের জিনিসের একটা ছবি পড়ে। সেই ছবি পড়ার দরুন সেই কাচে মাখান মসলাটাতে কেমন একটা পরিবর্তন হয়। সে পরিবর্তন তখন দেখা যায় না, কিন্তু তারপর সেই কাচখণ্ডকে আর কতকগুলি প্রক্রিয়ার অধীন করিলে তাহার পৃষ্ঠে জিনিসের একটা উল্টা ছবি (negative) ফুটিয়া উঠে। উল্টা ছবি বলিবার অর্থ এ নয়, যে আপনার পদদ্বয় উদ্ধে উঠিবে, আর শিরোব্রজে গমনাগমনের ব্যবস্থা হইবে। কিন্তু ইহার অর্থ এই যে, ঐ কাচে অঙ্কিত ছবিতে আলোকের স্থানে অন্ধকার, এবং অন্ধকারের স্থানে আলোক দেখা যাইবে। প্রকৃত ছবির যে স্থান যত কাল হওয়ার দরকার নেগেটিভের সেই স্থানটি তুতই স্বচ্ছ হইবে, আর প্রকৃত ছবির যে স্থান যত ফরসা হওয়ার দরকার, নেগেটিভের সেই স্থান ততই কাল হইবে।

 এখন এই নেগেটিভকে একখণ্ড মসলা মাখান কাগজের অথবা অন্য কোন উপযোগী জিনিসের উপরে স্থাপন করিয়া আলোতে ধরিলে সেই কাগজে একখানি প্রকৃত (Positive) ছবি (অর্থাৎ যাহাতে আলো ও ছায়া যথাযথরুপে ব্যক্ত হইয়াছে সেইরূপ ছবি) পাওয়া যাইবে। ইহাকেই আমরা ফটোগ্রাফ বলি।

 কথাটাকে নিতান্তই মোটামুটি বলা হইল। কিন্তু যাহাবা এ সম্বন্ধে কিছু জানেন, তাহদের পক্ষে এ সকল কথা অনাবশ্যক এবং বিরক্তিকর হইতে পারে। আর যাহারা এ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না, তাহাদিগকে সাময়িক পত্রের প্রবন্ধে দুকথা বলিয়া ইহার চাইতে পরিষ্কার জ্ঞান দেওয়া খুব কঠিন বোধহয়। উপযুক্ত নেগেটিভ, আর উপযুক্ত মসলা মাখানো ধাতুর পাত হইলে সেই ধাতুর পাতে পজিটিভ ছবি মুদ্রিত করা যায়। আর সেই ছবির এমন গুণ হইতে পারে যে, যে আরকে ডুবাইলে ধাতুর পাত গলিয়া যায়, সে আরকে এই ছবিখানির কোন অনিষ্ট হয় না। ছবি অক্ষত থাকে, তদ্ভিন্ন অন্য স্থানের ধাতু গলিয়া গিয়া তাহা গর্ত হইয়া যায়। এরূপ হইলেই তো আপনারা যাহাকে ‘এনগ্রেভিং’ বলেন তাহা হইল। ফটো মানে আলোক। মূলতঃ আলোকের সাহায্যে এই এনগ্রেভিং নিম্পন্ন হয় বলিয়া ইহার নাম হইয়াছে ‘ফটো এনগ্রেভিং’।

 দেখা যাইতেছে যে ফটো এনগ্রেভিং-এর মূল প্রক্রিয়া তিনটিঃ ১) নেগেটিভ প্রস্তুত, ২) ধাতুর পাতে পজিটিভ ছবি মুদ্রণ এবং ৩) উপযুক্ত আরকের সাহায্যে সেই ধাতুকে খোদাই (etch) করা।