পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯১২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এ স্থলে একটা কথার আলোচনা হওয়া দরকার হইতেছে। মনে করুন, একখানা ফটো অথবা পেনসিল কিম্বা তুলির আঁকা ছবি উড় এনগ্রেভারকে এনগ্রেভ করতে দিয়েছেন। আপনার প্রদত্ত ছবিতে যে উপায়ে আলো ও ছায়া ফলান হইয়াছে, সে উপায়ে কাঠের ব্লকে আলোছায়া ফলানো সম্ভব নহে। আপনার প্রদত্ত ছবিতে সাদা কাগজ হইতে আরম্ভ করিয়া মিশমিশে কালো পর্যন্ত অসংখ্য প্রকারের শেড় রহিয়াছে। এই অসংখ্য প্রকারের নয় সাদা নয় কাল শেড়কে ইংরাজি ভাষায় হাফটোন্ বলে। (উপেন্দ্রকিশোরের ফুট নোটুঃ ক্রমাগত ইংরেজী কথা ব্যবহারের ক্রটি মার্জনা করিবেন। এই সকল কথার এক একটা বাংলা প্রতিশব্দ ভাবিয়া স্থির করিয়াছিলাম। কিন্তু তাহদের অর্থ আর খানিক পরে স্বয়ং বুঝিতে পারিব কিনা, সে বিষয়েই গভীর সন্দেহ হওয়ায় তাহা পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছি)

 যাহা বলিতে ছিলাম। তুলিতে ছবি আঁকিবার সময় চিত্রকর যে উপায়ে হাফটোন্ ফলান, এন্গ্রেভারের সে উপায় অবলম্বন করা অসম্ভব। তুলির কাজে কালো রঙে যথেচ্ছ জল মিশাইয়াতদ্বারা যেরূপ শেড ইচ্ছা প্রস্তুত করা যায়। এনগ্রেভার কি তাহা পারেন? এনগ্রেভারের ব্লক একই কাগজে একই কালিতে ছাপা হইবে—জল মিশাইয়া সেই কালিকে আবশ্যক মত এক স্থানে পাতলা অপর স্থানে গাঢ় করিবার ব্যবস্থা তাহাতে খাটিবে না। ব্লকের যে সকল স্থান গর্ত, তাহা একেবারে সাদাই থাকিবে, আর যে সকল স্থান উচু তাহা একেবারে কালোই হইবে। অথচ আপনার চাই যে, সাদা হইতে কালো পর্যন্ত যত প্রকারের মাঝামাঝি শেড মূল ছবিতে আছে, ব্লক হইতে ঠিক তেমনটি ছাপা হয়—নইলে সে জিনিসটি হইবে না। সুতরাং এনগ্রেভারকেও সকল প্রকার হাফটোন্ ফলাইবার ব্যবস্থা করিতে হয়। একখানি এনগ্রেভিংএর ছাপ পরীক্ষা করিয়া দেখুন সে ব্যবস্থা কিরূপ।

 খুব সরু সরু কতকগুলি রেখা খুব কাছাকাছি টানিলে, একটু দূর হইতে তাহাদিগকে পৃথক পৃথক রেখার ন্যায় দেখা যায় না; কিন্তু তাহাদের একটি “শেডের” মতন দেখায়। রেখাগুলি যত মোটা আর তাহদের পরস্পরের ব্যবধান যতখানি, তাহার উপর সেই শেড়টির গাঢ়তা নির্ভর করে। রেখার পরিবর্তে বিন্দু দ্বারাও ঐরূপ শেড প্রস্তুত করা যায়। বিন্দুগুলির পরস্পরের ব্যবধান (ব্যবধান বলিতে, এক বিন্দুর ঠিক মধ্যস্থল পর্যন্ত যে দূরত্ব তাহাই বুঝিতে হইবে। কেবলমাত্র দুই বিন্দুর মাঝখানের সাদা অংশটুকুকে বুঝিলে চলিবে না।) যদি ঠিক রাখা যায়, তবে খালি তাহাদের আয়তনের উপর শেডের গাঢ়তা নির্ভর করে। যে স্থান একেবারে সাদা, সেখানে বিন্দু থাকিবে না, তার চাইতে একটু ময়লা হইলেই অতিশয় সূক্ষ্ম বিন্দুর আবশ্যক হইবে। ক্রমে যতই ঘোর রঙের দিকে যাইবেন, ততই বড় বড় বিন্দু দিতে হইবে। বিন্দুগুলি বড় হইতেছে, কিন্তু তাহদের ব্যবধান ঠিক রহিয়াছে সুতরাং শেষে এমন হইবে যে, এক বিন্দু অপর বিন্দুর গায় আসিয়া ঠেকিবে। রিন্দুর আকৃতি ভেদে এরূপ অবস্থায়ও তাহদের মাঝখানে থাকিতে পারে, যেমন গোল বিন্দুর মাঝখানে থাকে। কিন্তু ইহার চাইতে বড় হইলে আবার সেই ফাঁকটুকুও চলিয়া যাইবে। তখন একেবারে কালো রঙে আসিয়া উপস্থিত হইবেন। এই উপায়ে এনগ্রেভার হাফটোনের ব্যবস্থা করেন। যে ছবি প্রেসে ছাপা হইবে, তাহার সম্বন্ধে অন্যরূপ ব্যবস্থা প্রযোজ্য নহে।

 এখন কথা এই যে, একখানি ফটো হইতে আগাগোড়া ফটোগ্রাফীর সাহায্যে যদি ব্লক করা দরকার হয়, তাহ হইলে হাফটোনের ব্যবস্থা কি করিয়া হইতে পারে? তার জন্য একটা