পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯১৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সুন্দর বলিয়া জানি, তাহা তাহাতে খুঁজিয়া পাই না, সুতরাং সন্তোষ হয় না।

 সাহেবরাও আমাদের সংগীতের অলঙ্কারগুলির রস গ্রহণ করিতে পারেন না, অথচ তাহতে হারমনির অভাবের দরুন একটা মস্ত ত্রুটি দেখেন। সুতরাং তাঁহাদের ভাল লাগে না।

 যাহা বলা হইল, তাহাতে কোন সংগীত উৎকৃষ্ট, কোন সংগীত নিকৃষ্ট, তাহার কোন মীমাংসা হইবে না। তাহাতে কেবল এইটুকুই বুঝা যাইতেছে যে ভাল লাগে না বলিয়াই বাস্তবিক জিনিসটাতে কোন দোষ থাকা প্রমাণ হয় না। বুঝিবার গোলেও ভাল না লাগিতে পারে। অতপর, যাহা বলিতে বসিয়াছি।

 সাহেবেরা প্রাচ্য সংগীতের নিন্দা করিবার সময় তিনটি বিশেষণ বার বার ব্যবহার করেন, —“নাকী”, “বেসুরা”, “একঘেয়ে”।

 আমরাও তাহাদিগকে সহজে ছাড়ি নাই। এক বিশেষজ্ঞ একস্থানে বলিয়াছেন যে হারমনি অসভ্য গথ্ জাতির দ্বারা আবিষ্কৃত হইয়াছিল, সুতরাং ইহার ব্যবহার অসভ্যতার চিহ্ন! মানুষ অসভ্যাবস্থায় অনেক ভাল বিষয়েরই সূত্রপাত করিয়াছিল, সংগীত তাহার মধ্যে একটি। সুতরাং ইহা কি বলিতে হইবে যে গান করাটা অসভ্যতা? এক শ্রেণীর লোক আছেন, তাহাদের ইহাই বিশ্বাস যে “আমাদের যাহা, তাহার মতন আর ন ভুতো ন ভবিষ্যতি”। ইহাতে আর কিছু প্রমাণ না হউক, অনা দেশের সম্বন্ধে আমরা যে কি পরিমাণ কম খবর রাখি, তাহা সুন্দর প্রমাণ হয়।


ফটোগ্রাফীর চর্চা

 একজন চিত্রকর একটা সুন্দর স্থানের ছবি আঁকিতেছিলেন, এক চাষা তাহা দেখিতেছিল। কিছুকাল দেখিয়া চাষা চিত্রকরকে বলিল “এর চাইতে ফটো তুলিয়া লইলেই তো পারিতেন। তাহাতে শীঘ্র শীঘ্র হইত, আর জায়গার চেহারাটাও এর চাইতে খাঁটি হইত।”

 গল্পটি একখানি ইংরাজি সংবাদপত্রে পড়িয়াছিলাম, তাহাতে খুব প্রসিদ্ধ একজন চিত্রকরের উল্লেখ ছিল। সুতরাং ঘটনা সত্য হওয়া অসম্ভব নহে। সত্য হউক আর না হউক, ইহা দ্বারা একটি অতি প্রয়োজনীয় কথার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইতেছে। চাষা যাহা বলিয়াছিল, তাহ্য যে তাহার সাদাসিধা হিসাবে ঠিকই বলিয়াছিল, এ কথায় হয় তো কাহারও সন্দেহ হইবে না। অপর দিকে চাষা যাহা এত সহজে বুঝিয়া ফেলিল, তাহ যে চিত্রকরের মাথায় ঢোকে নাই, একথাও বিশ্বাসযোগ্য নহে;এ বিষয়ের মীমাংসা এইরূপ যে, হিসাবের স্থূলত্ব ধারণা হইতে পারে। চাষা সেইস্থানের কেবলমাত্র চেহারাটাই দেখিয়াছিল, কিন্তু চিত্রকর তাহার সৌন্দর্যের চর্চা করিতেছিলেন। কুৎসিতকে বাদ দিয়া সুন্দরকে গ্রহণ করা শিল্পীর কাজ। চাষা এত হিসাবের ধার ধারে না। হয়ত এইরূপ কারণেই চাষা বলিলে আমরা চটিয়া থাকি। চাষার দেখাতে বুদ্ধিবৃত্তি, জ্ঞানলিঙ্গা, সৌন্দর্যস্পৃহা বা কবিত্ত্ব, কোনটারই চর্চা হয় না, তাই ওরূপ দেখার মূল্য এত কম। যাহার দেখার ভিতরে উল্লিখিতরূপ কোন একটা ভাল উদ্দেশ্য আছে, তাহার দেখাই যথার্থ দেখা।

 চক্ষে দেখা আর কলে দেখাতে উপায়ের প্রভেদ আছে, কিন্তু কাজ একইরূপ এবং ফলও