পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

অসুখ করিয়াছে কিনা ব্যস্ততার সহিত জিজ্ঞাসা করিতেন।

 শেষ মুহূর্ত উপস্থিত হইলে নিজের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে পাদ্রী ডাকাইয়া মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হইলেন। কিন্তু পাদ্রীকে ঘরে ঢুকিতে দেওয়া হয় নাই। তিনি সার্সী আঁটা জানালার বাহিরে থাকিয়াই ভগবানের নাম করিলেন।

 দুই দিনের অসুখেই এই পরদুঃখকাতর মহাত্মার মৃত্যু হইল। পরের জন্য আপনাকে বিসর্জন দিয়া ডাক্তার মূলার এই জগতে অক্ষয় কীর্তি রাখিয়া গিয়াছেন। তাঁহার শোকে আজ সহস্র হৃদয় ম্রিয়মাণ।


তিব্বত

 হিমালয় পর্বতের উত্তরে তিব্বত দেশ—সেই যে দেশে আংটির মতন একটা হ্রদ আছে, ছেলেবেলা ভূগোলে পড়িয়াছিলাম যে, এই দেশের ছাগলের লোমে শাল হয়, আর সেখানে নাকি একটা মস্ত লামা থাকে।

 বাস্তবিক এই দেশটা আমাদের এত কাছে হইলেও আমরা ইহার সম্বন্ধে খুব কম খবর রাখি। ইহার প্রধান কারণ দুটিঃ ১) আমাদের এ দেশ হইতে তিব্বতে যাইতে হইলে হিমালয় পার হইয়া যাইতে হয়; ২) তিব্বতের লোকেরা বিদেশী লোককে সহজে তাহদের দেশে ঢুকিতে দেয় না।

 হিমালয় পর্বত পার হইয়া যাওয়া যে ভারী মুশকিলের কথা, এটা নিশ্চয়ই তোমরা অনেকটা বুঝিতে পার; কিন্তু ভাল করিয়া বুঝিতে পার কি না জানি না। হিমালয় পর্বত ভয়ানক উঁচু। তাহাকে ডিঙ্গাইতে হইলে লোকে অবশ্য তাহার অপেক্ষাকৃত নীচু স্থানটাই ডিঙ্গায়। কিন্তু এই পর্বতে ১৭০০০ (সতের হাজার) ফুটের চাইতে নীচু ডিঙ্গাইবার পথ নাই। সারা বছর সেখানে বরফ পড়িয়া থাকে। সেই বরফের উপর দিয়া পায় হঁটিয়া চলিবার সাধ্য নাই—এমনকি, ঘোড়াও তাহার উপর দিয়া সহজে যাইতে পারে না। চমরী গরুর পিঠে চড়িয়া এই সকল স্থান পার হইতে হয়। শীতের তো কথাই নাই, তাহা ছাড়া খাওয়া দাওয়ার অসুবিধাও খুব বেশি। তোমরা ডাল ভাত খাও, কিন্তু তিব্বতের পথে ডাল ভাত মিলে না। চিঁড়ে, ছাতু, চমরীর দুধ, এইসব খাইয়াই কাজ সারিতে হয়। গ্রীষ্মকালে বরফ কমে; তখন সকল স্থানে এত কষ্ট পাইতে হয় না;কিন্তু এরূপ সুবিধা দু’মাসের বেশি থাকে না। এসকল পথে ভল্লুকের ভয়ও আছে। তাহা ছাড়া শুধু বরফের দরুনই কত রকমের বিপদ হইতে পারে, তাহ শুনিলে আশ্চর্য হইবে। হাত পায়ের আঙ্গুল দুটা-একটা পচিয়া পড়া তো ধর্তব্যের ভিতরেই নহে। পথে চলিতে চলিতে বরফের ভিতর ডুবিলেই সর্বনাশ! এক এক স্থান এমন ভয়ানক যে, মাথার উপরে পর্বত প্রমাণ বরফ আলগোছে ঝুলিতেছে, সামান্য একটু ছুতা পাইলেই ঘাড়ে পড়িয়া মুহুর্তের মধ্যে তিব্বত যাইবার আশা মিটাইয়া দিবে। একটু অসতর্ক হইয়া পথ চলা, এমনকি, একটি গান ধরা, এরূপ সামান্য কারণ হইতে এইরূপে বরফ চাপা পড়িয়া দলসুদ্ধ লোক মারা যাইবার কথা শুনা গিয়াছে।

 এত কষ্ট করিয়া তিব্বতে যাইতে হয়, সেখানকার লোকেরা আবার তাহাদের দেশে ঢুকিতে দিতে চায় না। সাধু সন্ন্যাসী ভিন্ন অন্য লোক এ দেশ হইতে তিববতে খুব অল্পই