গিয়াছেন। যাঁহারা গিয়াছেন, তাঁহাদেরও অধিকাংশই অতি কষ্টে অল্প দিন মাত্র সেখানে থাকিয়া শেষটা—অনেক সময় প্রাণের ভয়ে—চলিয়া আসিতে বাধ্য হইয়াছেন। এইজন্যই তিববত দেশের এত কম খবর এ দেশে আসে। যাহা আসে, তাহারও কতটা খাঁটি তাহার নিশ্চয় নাই৷
তিববত দেশটা খুব উঁচু। আমাদের এ দেশের চাইতে মোটের উপরে দু মাইল উঁচু হইবে। অবশ্য ইহার চাইতে কম উঁচু স্থানও আছে, তেমনি আবার তিন মাইল উঁচু স্থানও আছে। পাহাড়ে দেশ; কাঁকরে মাটি। বৃষ্টি বাদ্লা বড় একটা নাই। শীতকালে অসম্ভব শীত, আবার গ্রীষ্মকালে কয়েকটা দিন ভয়ানক গরম। হাওয়া যারপরনাই শুকনো। সেদেশে জিনিস পচিতে পায় না। মাংস শুকাইয়া এমন হইবে যে, টিপিলে গুঁড়া হইয়া যায়; কিন্তু তাহাতে গন্ধ হওয়া বা পচা ধরা—তাহা কখনই হইবে না৷
তিববতের অনেক স্থানই অনুর্বর, তাহাতে গাছপালা বেশি জন্মে না। কিন্তু অনেক উর্বরা মাঠও আছে, তাহাতে খুব ঘাস হয়, আর অনেক জীব জন্তু তাহাতে বাস করে। চমরী, ঘোড়া, গাধা আর ভেড়াই ইহাদের মধ্যে প্রধান৷
এ দেশের প্রধান শস্য যব, রুটি, ছাতু ইত্যাদি প্রধান খাদ্য। মাখন খুব পুরাতন হইলেই বেশি পছন্দ হয়। ছাগলের চামডার থলিতে মাখন রাখিয়া দেওয়া হয়। সে মাখন যত পুরাতন হয়, ততই তার দাম বাড়ে, এক পুরুষের লোকেরা মাখন রাখে, হয়ত তার পরের, এমনকি, তারও পরের পুরুষের লোকেরা তাহা ব্যবহার করবে। খুব উঁচু দরের মাখন ৪০/৫০ বৎসরেরও হয়। এত ভাল মাখন অবশ্য সর্বদাই খাইতে পাওয়া যায় না। বিবাহাদি বড় বড় উৎসব ভিন্ন তাহার থলি খোলা হয় না৷
তিববতীরা চা খুব কম খায়। তবে ঘৃতের ন্যায়, চা-টাও একটু নূতন ধরনের। তাহাতে নুন থাকে, আর খানিকটা মাখনও থাকে। এই চা প্রস্তুত করিবার সময় তাহা খুব ঘাঁটিতে হয়৷
তিববতের লোকেরা ভাল চা-ও প্রস্তুত করিতে জানে। এক সাহেব তিব্বতের প্রধান সেনার সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলেন; সেখানে তাঁহাকে চা খাইতে দিয়াছিল। তিনি বলিয়াছেন যে, সে চা খাইতে খুব ভাল। তাঁহার সবটাই খাইবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শেষ না হইতেই পিয়ালা লইয়া গেল। তিববতে মানুষ মরিলে তাহাকে কুকুর দিয়া খাওয়ায়। গরীব লোক মরিলে তাহাকে সাধারণ কুকুরেই খায়; কিন্তু বড় লোকদের জন্য মঠ মন্দিরেতে ভাল কুকুর রাখা হয়। কেহ মরিলেই তখনি কিন্তু তাহাকে কুকুর দিয়া খাওয়ায় না। মড়াটা পাছে উঠিয়া ঘরের লোকের উপর উৎপাত করে, সেই ভয়ে, মরিবার পরেই তাহাকে বেশ করিয়া বাধিয়া, দেওয়ালে হেলান দিয়া দাঁড় করাইয়া কয়েক দিন রাখিয়া দেয়৷
তিববতীরা বেঁটে ও বলিষ্ঠ। দেখিতে কতকটা চীনেদের মতন। ইহাদের স্বভাব বড় নোংরা। বৎসরে একদিন স্নান করে। কাপড় পরিয়া সেটা ছিড়িয়া টুকরা টুকরা না হইলে, আর তাহা ছাড়ে না। ইহারা বেশ পরিশ্রমী। পুরুষদের চাইতে স্ত্রীলোকেরা বেশী পরিশ্রম করে। পশমের সুতা পাকান, আর তাহা দ্বারা নানারকম জিনিস প্রস্তুত করা পুরুষদের একটা প্রধান কাজ৷
ইহারা মহিষের চামড়ার ভিতরে হাওয়া পুড়িয়া তাহ নদীতে ভাসাইয়া দেয়। নদী পার হইতে হইলে ইহাই তাহদের খেয়া। এ খেয়াতে দাঁড়, লগী বা হালের প্রয়োজন হয় না। তুমি