পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
৯৩

অযোধ্যাকাণ্ড

 জা দশরথের বয়স প্রায় ষাট বৎসর হইয়াছে। এত বয়স হইলে কতখানি বুড়ো হয় বুঝিতে পার। কাজেই তিনি এখন আর রাজ্যের কাজের জন্য আগের মতন পরিশ্রম করিতে পারেন না। আর রামও এতদিনে বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, জোরে, সাহসে,—যত রকম গুণ হইতে পারে, সকল গুণেই—সকলের বড় হইয়া উঠিয়াছেন। ইহা দেখিয়া দশরথ একদিন মন্ত্রীদিগকে বলিলেন, ‘আমি এখন বুড়ো হইয়াছি, আর কতদিনই বা বাচিব। তাই আমি মনে করিতেছি যে রামকে যুবরাজ করিয়া দেই।’ এই বলিয়া তিনি মন্ত্রী পাঠাইয়া দেশ বিদেশে সংবাদ দিলেন, ‘আমি একটা মস্ত সভা করিব।’

খবর পাইয়া পৃথিবীর যত ভাল ভাল রাজা আর বড় লোক সকলে দশরথের সভায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সেই সভায় দশরথ বললেন, ‘দেখ, এতদিন আমি যতদূর পারিয়াছি রাজ্যের কাজ করিয়াছি। এখন আমার অনেক বয়স হইয়াছে, চুল পাকিয়া গিয়াছে গায়ের জোর কমিয়া গিয়াছে। এই বুড়া বয়সে আমি আর রাজ্যের জন্য এত পরিশ্রম করিতে পারি না। আমার রাম এখন বড় হইয়াছেন, আর তাহার গুণের কথা তোমরা সকলেই জান। এজন্য আমি এখন তাহার হাতে রাজ্যের ভার দিতে চাহিতেছি। তাহাতে তোমরা কী বল?’

এ কথায় সকলে বলিল, ‘মহারাজ, রামের গুণের কথা কী বলিব! পৃথিবীতে এমন আর নাই! দেশের লোক রামকে যে কত ভালবাসে, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। আপনি রামকে যুবরাজ করিয়া দিন, দেখিয়া আমাদের চক্ষু জুড়াক।’

তখন দশরথ বলিলেন, ‘সুন্দর চৈত্র মাস আসিতেছে বনে ফুল ফুটিয়াছে। আপনারা শীঘ্র আয়োজন করুন। এই সুন্দর সময়ে রামকে যুবরাজ করিতে হইবে!’ এই কথা শুনিয়া সভার লোক এতই আনন্দিত হইল যে, তাহদের কোলাহলে সভার ঘর ফাটে আর কি!

দশরথের কথায় মন্ত্রী সুমন্ত্র তখনি রামকে লহয়া আসিলেন। দশরথ পরম আদরের সহিত তাহাকে কাছে বসাইয়া বলিলেন, ‘বাবা, তোমার যেমন গুণ, সকলে তোমাকে তেমনি ভালবাসে। এখন তুমি যুবরাজ হও, তাহা দেখিয়া সকলে সুখী হউক।’ রামের যাহারা বন্ধু, তাহারা শুনিবামাত্র ছুটিয়া গিয়া কৌশল্যাকে খবর দিল। সে সংবাদে কৌশল্যা কিরূপ খুশি হইয়াছিলেন, আর তাহাদিগকে কত পুরস্কার দিয়াছিলেন, তাহা বুঝিতেই পার।