পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৩৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাঁহাকে সেলাম করিল না। তিনি দৌড়িয়া যুবরাজের কাছে গিয়া বলিলেন—

 ‘বাবা! বাবা! তোমার বরকন্দাজগুলিকে চাবুক মার। আমি যাইবার সময় এরা আমাকে সেলাম করিতে চাহে না।’

 যুবরাজ বলিলেন, ‘বাছা, তাহারা ভালোই করে। পরিষ্কার সিপাহীরা কখনো অপরিষ্কার ছোট-কর্তাকে সেলাম করে না।’ এর পর হইতে যুবরাজ নন্দন প্রত্যহ প্রাতে স্নান করিতেন।

 যুবরাজপুত্রের অভিমানই তাহার কু-স্বভাব সংশোধন করাইল।


নানা প্রসঙ্গ : ৩

সাহসী বালক

 একদিন আমরা স্কুলে যাইতেছি এমন সময় দেখিলাম আমাদের সহপাঠী একটি বালক নিকটস্থ মাঠের দিকে একটা গোরু লইয়া যাইতেছে। পথে একদল ছেলের সঙ্গে তাহার দেখা হইল। ঐ দলের জ—ঠাট্টার বিষয় পাইলে কখনও ছাড়িত না। জ—বলিয়া উঠিল, ‘কিহে! দুধের দাম কত? বলি উ—তুমি কোন ঘাস খাও? গোরুর শিঙ্গে যে সোনাটুকু আছে তাহার দাম কত? ওহে, তোমরা দেখ! যদি নূতন ফ্যাশন্‌ দেখিত চাও তবে এই জুতা জোড়াটার পানে তাকাও।’

 উ— একটু হাসিয়া আমাদিগকে নমস্কার করিল, তারপর মাঠের চারিধারে যে বেড়া ছিল তাহার দরজা খুলিয়া গোরুটিকে ভিতরে দিল। তারপর দরজা বন্ধ করিয়া আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলে আসিল। বিকালে স্কুলের ছুটির পর গোরুটিকে বাহির করিয়া লইয়া গেল, কোথায় নিল আমরা কেহই জানিতে পারিলাম না। দুই-তিন সপ্তাহ ধরিয়া সে রোজই এই কাজ করিতে লাগিল।

 এই স্কুলের ছেলেরা প্রায়ই ধনীর সন্তান। ইহাদের কতকগুলি আবার এমন মূর্খ ছিল যে, গোরু মাঠে লইয়া গিয়াছিল-বলিয়া উ-কে ঘৃণা করিত।

 ইহারা উ-র মনে কষ্ট দিবার জন্য নানারকম বিশ্রী কথা বলিত। উ-তাহাতে কিছুমাত্র বিরক্ত না হইয়া সে-সকল সহ্য করিত। একদিন জ-বলিল, “কিহে উ—তোমার বাবা কি তোমাকে গোয়ালা করিতে চাহিতেছেন নাকি?’

 উ—বলিল, ‘ক্ষতি কি?’

 ‘ক্ষতি কিছু নয়, তবে দেখো যেন কেঁড়ে ধুইয়া তাহাতে খুব বেশি জল রাখিয়া দিও না।’

 সকলে হাসিল। উ—কিছুমাত্র অপ্রতিভ না হইয়া উত্তর করিল, ‘তার কোন ভয় নাই। আমি যদি কোনোদিন গোয়ালা হই, তবে খাঁটি ওজনে খাঁটি দুধ দিব।’

 এই কথাবার্তার পরদিন স্কুলের পরীক্ষার প্রাইজ দেওয়া হইল। তাহাতে নিকটবর্তী স্থান সকলের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। স্কুলের অধ্যক্ষ প্রাইজ দিলেন। উ— আর জ— উভয়েই খুব ভালো নম্বর পাইয়াছে, পড়াশুনায় তাহারা সমকক্ষ। পুরস্কার বিতরণ শেষ হইলে অধ্যক্ষ বলিলেন যে আর একটি পুরস্কার আছে, সেটি একটি সোনার মেডেল। এই পুরস্কারটি সচরাচর দেওয়া হয় না। ইহাতে অনেক টাকা লাগে বলিয়া যে দেওয়া হয় না