এই ভাবিয়া সকলে ঠেলিয়া তাহাকে ঘরের বাহির করিয়া দিল, আর আমনি ঘরের উপর বাজ পড়িয়া তাহারা মরিয়া গেল। যাহাকে বাহির করিয়া দিয়াছিল সে বাঁচিল।
একটি ছোটছেলের বাপ-মা মরিয়া যাওয়াতে সে বড়ই দুঃখে পড়িল। সে মনে করিল যে এরূপ দুঃখ সহ্য করার চাইতে মরিয়া যাওয়াই ভালো। এই ভাবিয়া সে একটা গর্ত খুঁড়িতে আরম্ভ করিল। এমন সময়ে এক পুত্রহীন সওদাগর সেই পথ দিয়া যাইতেছিল, সে সেই ছেলেটিকে ঐরাপ গর্ত খুঁড়িবার কারণ জিজ্ঞাসা করিল। বালক উত্তর করিল, আমার মা নাই, বাপ নাই, আমার আর বাঁচিয়া ফল কি? আমি এই গর্তে পড়িয়া মরিব।” সওদাগরের বড় দয়া হইল, সে বলিল, “তোমার মরিয়া কাজ নাই, তুমি আমার সঙ্গে এস, আমরাই তোমার বাপ-মা হইব।’ বালক সওদাগরের সঙ্গে তাহার বাড়িতে গেল, সেখানে সে খুব যত্ন পাইতে লাগিল। কিছুদিন পরে সওদাগরের এক ছেলে হইল। সওদাগর ও তাহার স্ত্রী এখন সেই দুঃখী ছেলেটিকে অত্যন্ত হিংসা করিতে লাগিল। তাহদের হিংসা এতদূর বাড়িয়া উঠিল যে তাহারা সেই ছেলেটিকে মারিয়া ফেলিবার জন্য একটা গভীর কুপ খুঁড়িয়া রাখিল— মনে করিল, ‘একবার তো কূপে পড়িয়াই মরিতে গিয়াছিল, এবারে কূপ প্রস্তুত রহিয়াছে দেখিলে অবশ্যই তাহাতে ঝাঁপিয়া মরিবে। কিন্তু সেই দুঃখী সন্তান ইহার কোনো খবর পাইবার পূর্বেই সওদাগরের নিজের ছেলে সেই কূপ দেখিতে গেল এবং হঠাৎ তাহাতে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিল।
গল্পগুলি সত্য না হউক ইহাদের ভিতর বেশ উপদেশ আছে। পরের মন্দ ভাবিও না। দেখ এই সকল লোক পরের অনিষ্ট করিতে গিয়া কি শক্তিই পাইল।
চীনেদের বড় বুদ্ধি। গ্রাম্য লোকদিগের অনেকে এখনো বিশ্বাস করে যে স্টীম-এঞ্জিন, টেলিগ্রাফ ইত্যাদি বড়-বড় কলকারখানা সব চীনেদের তৈরি। বাস্তবিক চীনেদের সম্বন্ধে লোকের এরূপ বিশ্বাস হইবার কারণ আছে। পূর্বকালে যখন অন্যান্য দেশের লোকেরা এসব বিষয়ে কিছু জানিত না, তখন চীনেরা অনেকরকম কল ও সংকেত জানিত তখন যাহা কিছু আশ্চর্য হইত প্রায় সবই চীনেরা প্রস্তুত করিত। এইরূপেই চীনেদের এরূপ নাম হইল।
যে ছাপাখানা দ্বারা পৃথিবীর এত উপকার হইয়াছে, তাহারও প্রথম মতলবটা চীনেদেরই মাথায় খেলিয়াছিল। গল্প আছে খৃস্টীয় দশম শতাব্দীতে চীন রাজমন্ত্রী ফুং তেও প্রথম ছাপিবার সংকেত আবিষ্কার করেন। অনেক হুকুম, ঘোষণাপত্র ইত্যাদি এত অধিকবার লিখিতে হইত এবং তাহতে এত অধিক সময় লাগিত যে তাহতে রাজকার্য সুন্দররাপ চলিবার বড়ই ব্যাঘাত হইত। সুতরাং তিনি মনে করিলেন যে ইহা অপেক্ষা সহজ উপায় একটা বাহির করা আবশ্যক। তিনি দেখিলেন যে সেই সকল হুকুম কাঠে খোদাই করিয়া তাহাতে কালি দিয়া, তাহা হইতে ছাপ তুলিলেই এই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইতে পারে। এইরূপে তিনি মুদ্রাঙ্কনের মূলমন্ত্র আবিষ্কার করিলেন। সেই সময়ে পী চিং নামক একজন কর্মকার বাস করিত। সে