পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৪৩

দেখিল যে মস্ত একটা হুকুম কাঠে খোদাই করার চাইতে আলাদা আলাদা অক্ষর খোদা থাকিলে সেইগুলি আবশ্যক মতো একত্র করিয়া অতি সহজেই কাজ চালানো যাইতে পারে। সে মাটির অক্ষর তৈরি করিয়া তাহাদ্বারা পরীক্ষা করিয়া দেখিলে যে পৃথক অক্ষর রাখিলে বেশ কাজের সুবিধা হয়। কিছুদিন পরে পী চিং মরিয়া গেল। তাহার ছেলেদের বুদ্ধি ততটা পাকা হয় নাই, সুতরাং তাহারা মনে করিল যে বাবা কি ছেলেখেলা নিয়াই জীবনটা কাটাইয়া গিয়াছেন। এই ভাবিয়া তাহারা পী চিঙের অক্ষরগুলি ফেলিয়া দিল। শীলমোহরের গোছ করিয়া কাঠ খোদাই করা ভিন্ন ছাপার কার্যের আর অধিক উন্নতি চীনাদের দ্বারা হইল না।

 জার্মানি দেশে গুটেনবার্গ নামক একজন লোক ছিলেন, তিনিই প্রকৃত পক্ষে মুদ্রাযন্ত্রের আবিষ্কার করেন। তিনিও প্রথমে খোদাই করা কাঠ হইতেই ছাপ তুলিলেন। ফষ্ট্র নামক এক ব্যক্তি গুটেনবাগের আবিষ্কারে বড়ই সন্তুষ্ট হইলেন, এবং তাঁহার সহিত যোগ দিয়া এই কার্যে তাঁহাকে বিশেষ উৎসাহিত করিতে লাগিলেন। কিছুকাল পরেই গুটেনবার্গ বুঝিতে পারিলেন যে হাতে ছাপ না তুলিয়া ছাপ তোলার জন্য কোনোরূপ যন্ত্র থাকিলে বড়ই ভালো হয়। তিনি একটি যন্ত্রের কথা ভাবিয়া কনরেড় সামপাক নামক একজন ছুতোরকে বলিলেন, সে তাঁহাকে এক কাঠের ছাপাখানা প্রস্তুত করিয়া দিল। এই ঘটনার দুই বৎসর পরে (১৪৩৮ খৃষ্টাব্দে) কষ্টাব নামক একজন লোক প্রথমে পৃথক অক্ষরের সৃষ্টি করিলেন। এইরূপে প্রকৃত প্রস্তাবে মুদ্রাযন্ত্রের সৃষ্টি হইল। সর্বপ্রথমে তাঁহারা বাইবেল গ্রন্থ ছাপিতে আরম্ভ করেন। এই প্রথম মুদ্রাঙ্কিত গ্রন্থ এখন অতি দুপ্রাপ্য হইয়াছে। অল্পদিন হইল নিউইয়র্ক নগরে (আমেরিকায়) ইহার একখণ্ড নিলামে বিক্রয় হইয়াছিল, তাহার মূল্য ১৮০০০ (আঠারো হাজার) টাকা হইয়াছিল।

 ইংরাজেরা জর্মানদের নিকট হইতেই এই বিদ্যা লাভ করেন। উইলিয়ম ক্যাক্স্টন নামক এক ব্যক্তি কলোন নগরে আসিয়া ছাপার কাজ শিক্ষা করেন। তিনি দেশে ফিরিয়া আসিলে ইংলণ্ডের রাজা ১৪৭৪ খৃস্টাব্দে তাঁহাকে একটি ছাপাখানা স্থাপন করিতে অনুমতি দেন। ওয়েস্টমিনস্টার এবি নামক গীর্জাতে সেই ছাপাখানা স্থাপিত হয়।

 ইংলণ্ডে ক্যাক্স্টনের যে গৌরব, আমাদের দেশে মহাত্মা কেরীরও সেই গৌরব হওয়া উচিত। কেরী সাহেবই প্রথমে এদেশে ছাপাখানা আনয়ন করেন। তাঁহারই যত্নে প্রথম বাঙ্গালা অক্ষর প্রস্তুত হইল। শ্রীরামপুরে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়। তখনকার ছাপা এখন দেখিলে হয়তো তোমরা হাসিবে। আমি বহুকালের পুরাতন একখানি অভিধান দেখিয়াছি। তাহাতে বাঙ্গালা শব্দের ইংরাজি অর্থ লেখা আছে। অভিধানখানি ঠিক ওয়েবস্টারের বড় ডিক্সনারির ন্যায় বড় হইবে। ইহার বাঙ্গালা অক্ষরগুলি দেখিতে হাতের লেখা অক্ষরের মতো, কিন্তু বেশ পরিষ্কার। এখন অক্ষরের অনেক উন্নতি হইয়াছে, কিন্তু এক কথা মনে রাখিও, কেরী সাহেবের নিকট আমরা এই সকলের জন্য ঋণী।

 আজকাল ছাপাখানার কিরূপ উন্নতি হইয়াছে তাহা আমাদের দেশের দুই একটি প্রেস দেখিয়া বুঝতে পরিবে না। নিম্নে প্রধান পাঁচটিছাপার কলের কথা উল্লেখ করা যাইতেছে— ১ ম্যারিননির-কৃত। এই কল প্রতি ঘণ্টায় ১৫০০০ হইতে ২০০০০ করিয়া ছাপে। ২ জুলিস ডেরীকৃত। এই কল প্রতি ঘণ্টায় ১৬০০০ হইতে ৩২০০০ করিয়া ছাপে। ৩ হো সাহেব-কৃত। আমেরিকার তিনটি প্রধান খবরের কাগজ ছাপিতে এইরূপ তিনটি