পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
৯৫

এই বেলা যাহাতে ভরত রাজ্য পায় আর রাম বনে চলিয়া যায়, তাহার উপায় দেখ।’

 হায় হায়, কুঁজী হতভাগী কেন পৃথিবীতে জন্মিয়াছিল? কৈকেয়ীর মন তো আগে মন্দ ছিল না! দুষ্ট কুঁজীই তো তাঁহার ভিতরে হিংসা ঢুকাইয়া দিল। কুঁজী যখন ভরতকে রাম মারিয়া ফেলিবে বলিয়া ভয় দেখাইল, তখন কৈকেয়ী বলিলেন, ‘মন্থরা আজই আমি রামকে বনে পাঠাইয়া ভরতকে রাজা করিব। এখন এই কাজটি কেমন করিয়া হইতে পারে বল।’

 কুঁজী বলিল, ‘সেকি! তুমি কি সব ভুলিয়া গিয়াছ? সেই যে দণ্ডক-বনের ভিতরে বৈজয়ন্ত নগরে সম্বর অসুর ছিল, দেবতাদের সঙ্গে তাহার ভয়ানক যুদ্ধ হয় সেই যুদ্ধে আমাদের রাজা দেবতাদের সাহায্য করিতে গিয়াছিলেন, তোমাকে সঙ্গে নিয়াছিলেন। রাজা ভয়ানক অস্ত্রের ঘা খাইয়া যুদ্ধের জায়গাতেই অজ্ঞান হইয়া গেলেন, তখন তুমিই তাহাকে সেখান হইতে লইয়া আসিয়া বাঁচাইলে। তাহাতে তিনি তোমাকে দুইটি বর দিতে চাহিলেন;তুমি বলিলে, “যখন ইচ্ছা হয় লইব”। এ-সকল কথা তো তোমার মুখেই শুনিয়াছি। এখন কেন সেই বর চাহিয়া লও না? এক বরে রামকে বনে পাঠাও, আর এক বরে ভরতকে রাজা কর। তাহা হইলেই আপদ চুকিয়া যাইবে। এক কাজ কর। তুমি ময়লা কাপড় পরিয়া, মুখ ভার করিয়া, মেঝেতেই পড়িয়া থাক। রাজা আসিলে কথাটিও কহিবে না, খালি রাগ করিবে আর কাঁদিবে। রাজা তোমাকে যে ভালবাসেন! তোমার রাগ দেখিলে নিশ্চয়ই ভয় পাইবেন, আর যাহা চাও তাহাই দিয়া তোমাকে খুশি করিবেন। কিন্তু খবরদার! আগে রাজার মুখ দিয়া এই কথাটি বাহির করিয়া লইবে যে তুমি যাহা চাও তাহাই তিনি দিবেন। এইরকম করিয়া তাহাকে কথায় আটকাইয়া তারপর বর দুইটি চাহিবে। তাহা হইলে আর তাহার “না” বলিবার জো থাকিবে না!'

 এইরূপ করিয়া কুঁজী কৈকেয়ীর মন একেবারে খারাপ করিয়া দিল। তখন তাঁহার মুখে কুঁজীর প্রশংসা আর ধরে না! এরপর ময়লা কাপড় পরিয়া, গহনা ভাঙিয়া, রাগের ভরে মেঝেতে শুইতে আর কতক্ষণ লাগে।

 এদিকে রাজা দশরথ রামের সংবাদ লইয়া কৈকেয়ীর মহলে আসিয়া দেখেন—কৈকেয়ীর মুখে কথা নাই গায়ে অলঙ্কার নাই, তিনি মেঝেতে পড়িয়া কেবলই কদিতেছেন। কী সর্বনাশ! কৈকেয়ীর কী হইয়াছে? কে তাহার এমন দশা করিল? বেচারা বুড়া রাজা ব্যস্ত হইয়া এইরূপ কত কথা ভাবিতে লাগিলেন। কিন্তু কে তাহাকে বলিয়া দিবে কৈকেয়ীর কী হইয়াছেঃ রাজা কত মিষ্ট করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কৈকেয়ী, তোমার কি কোন অসুখ হইয়াছে? না কেহ তোমাকে কিছু বলিয়াছে? না তুমি কাহারও উপর রাগ করিয়াছ?’ কৈকেয়ী কোন কথারই উত্তর দিলেন না।

 শেষে রাজা বলিলেন, ‘তোমার কি কিছু চাই? বল সেটা কোন জিনিস, এখনই তাহা দিতেছি। তখন কৈকেয়ী বলিলেন, আগে প্রতিজ্ঞা কর দিবে, তবে বলিব। রাজা বলিলেন, এই পৃথিবীতে রামের মতন আমি কাহাকেও ভালবাসি না। সেই রামের নাম লইয়া আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি, তুমি যাহা চাইবে তাহাই দিব।’

 এ কথা শুনিয়া কৈকেয়ী বলিলেন, ‘দেবতারা শুনুন, রাজা কী প্রতিজ্ঞা করিতেছেন। মহারাজ, সেই দেবাসুর যুদ্ধের কথা মনে কর। সেই যে তুমি ভয়ানক ঘা খাইয়াছিলে, আর আমি তোমাকে বাঁচাইয়াছিলাম। তখন যে আমাকে দুটি বর দিতে চাহিয়াছিলে, আর আমি