পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৫৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

অধিক ঘোলা হয়, এই পলি ততই পুরু হইয়া পড়ে, আর জোয়ার যত বেশি হয় নদীর দুপাশের জমি ততই দূর অবধি ডুবিয়া যায়৷

 অমাবস্যা পূর্ণিমায় যত জোয়ার হয়, অষ্টমীর দিন তাহার চাইতে অনেক কম হয়। অমাবস্যার দিন অনেক দূর অবধি ডুবিয়া পলি পড়িয়াছে। আবার পূর্ণিমা না আসিলে এত দূর জল আসিবে না। এর মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয়, তবে এই পলি শুকাইয়া শক্ত হইয়া যাইবে। যখন এই পলি কোমল ছিল, তখন ইহার উপর দিয়া কত পশুপক্ষী চলিয়াছে, কত গাছের পাতা বাতাসে উড়িয়া আসিয়া ইহার উপরে পড়িয়াছে। মিহি কাদায় সেই সকল পশুপক্ষীর পা এবং সেই সকল পাতার অতি চমৎকার ছাঁচ রহিয়াছে। এর মধ্যে যদি দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি হইয়া থাকে, তবে প্রত্যেকটি ফোঁটার দাগ রহিয়াছে। একবার শুকাইতে পারিলেই এই সকল দাগ ও ছাঁচ চিরস্থায়ী হইয়া রহিল। পূর্ণিমার সময় ইহার উপর আবার একস্তর পলি পড়িবে, কিন্তু সে পলিতে এই সকল দাগের কোনো অনিষ্ট হইবে না। প্রতিদিন সকালে অনেক ঘরের মেঝেতে মাটির লেপ দেওয়া হয়। এই সকল লেপের স্তর একটির সঙ্গে আর একটিমিশিয়া যায় না। পুস্তকের পাতার মতো তাহারা পৃথক পৃথক থাকে। পলি পড়ার সম্বন্ধেও ঠিক তেমনি। এক স্তর পলি যদি শুকাইতে পাইল, তবে আর এক স্তর পলি তাহার উপরে পড়িলেও দুটি স্তর পৃথক পৃথক থাকিবে৷


পুরাতন কথা: ৩

 এতক্ষণ যাহা বলা গিয়াছে, তাহা হইতে কি শিখিলাম, দেখা যাউক—

 ১ পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশে ক্রমাগত পরিবর্তন হইতেছে। দেশ ডুবিয়া সাগর হইতেছে, সাগর ডুবিয়া দেশ হইতেছে৷

 ২ জল থিতাইয়া পলি পড়ার দরুন নানারূপ গাছপালা জীবজন্তু ইত্যাদির চিহ্ন থাকিয়া যাইতেছে৷

 এই দুইটি কথা বেশ করিয়া মনে রাখ। তারপর যাহা বলি শ্রবণ কর৷

 অনেক সময় জলে এমন সব জিনিস সব মিশ্রিত থাকে যে, তাহার সাহায্যে জলে ডোবা বস্তুগুলি পাথর হইয়া য়ায়। একবার এইরূপে পাথর হইতে পারিলে আর সে-সব জিনিসের ধ্বংস হয় না—যুগ-যুগান্তর ধরিয়া তাহাদের চিহ্ন বর্তমান থাকে। পাথর মানুষের অতিশয় প্রয়োজনীয় বস্তু, সুতরাং মানুষেরা তাহা সংগ্রহ করিতে যায়। এইরূপে পাথর আনিতে গিয়া তাহার ভিতরে অনেক সময় নানাপ্রকার জীবজন্তুর হাড় পাওয়া যায়। সেই সকল হাড় দেখিয়া পণ্ডিতেরা স্থির করিতে পারেন, তাহা কিরূপ জন্তুর হাড় ছিল। লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বে কোনো নদীর তলায় পলি পড়িয়ছিল, তখন একটা জন্তুর মৃতদেহ তাহাতে ঢাকা পড়িয়াছিল। জলে এমন কোনো পদার্থ ছিল, যাহার জন্য ঐ-সকল পলি এবং হাড় পাথর হইয়া গেল। কালক্রমে সে স্থানের মাটি উচু হইয়া সেখানে একটা পাহাড় হইল। আজকাল সেই পাহাড়ের কাছে মানুষ বলিয়া একরকম জন্তু চলাফেরা করে। তাহদের ঘরদোর তয়ের করিবার জন্য পাথরের দরকার হয়, সেই পাথর তাহার ঐ পাহাড়ের গা হইতে কাটিয়া বাহির করিতে গিয়া ঐ হাড়গুলি পাইল। অনতিবিলম্বে পলিয়ণ্টলজিস্ট নামক একপ্রকারের পণ্ডিত