গাত্রোত্থান করিয়া সাহেবকে অভ্যর্থনা করিলেন। সাহেবও অবিকল সেইরূপ অঙ্গভঙ্গি করিয়া প্রতিনমস্কার জানাইলেন। নিকটস্থ হইলে দলপতি সস্নেহে সাহেবের হাতখানি টানিয়া লইলেন, এবং ধীরে ধীরে তাহার ঠিক মধ্যস্থলে অতি সুন্দর এক বিন্দু থুথু ফেলিলেন, সাহেবের অন্তরাত্মা শিহরিয়া উঠিল, কিন্তু পাছে অসভ্যতা হয়, তাই বাহ্যিক কিছু প্রকাশ করিলেন না। দলপতি নিবৃত্ত হইবামাত্রই সাহেব তাঁহার হাতখানি টানিয়া লইয়া নূতন শিক্ষিত প্রণালী অনুসারে যথাসাধ্য সদ্ভাব জ্ঞাপন করিলেন। সাহেবের এই ব্যবহারে উপস্থিত সকলেই যারপরনাই খুশি হইলেন এবং সন্ধি হইতে আর কোনো গোল হইল না।
অন্ধদের বই পড়া
ডাক্তার মুনের নাম অনেকে শুনিয়াছেন। ১৮৩৫ সালে ইনি অন্ধ হন। সে আজ পঞ্চাশ বছরের কথা। এত কাল ইনি অন্ধদের জন্য খাটিয়াছেন, বিশেষত কিরূপ অক্ষরে পুস্তক ছাপা হইলে তাহাদের পক্ষে বেশি সুবিধা, তাহার সম্বন্ধে অনেক চিন্তা করিয়াছেন।
অন্ধেরা কিরূপে পড়িতে পারে, এ কথা কেহ জিজ্ঞাসা করিতে পার। যাহাদের চোখ নাই, তাহারা যে আমাদের মতো চোখের সাহায্যে পড়িতে পায় না, এ কথা সহজেই বুঝা যায়। অন্ধেরা হাতের সাহায্যে পড়ে। প্রায়ই দেখা যায় যাহাদের একটা শক্তি নাই, আরেকটা শক্তি তাহাদের খুব প্রখর হয় আর তা হওয়াও স্বাভাবিক, একটা শক্তি না থাকিলে অপর একটার দ্বারা তাহার কাজ চালাইতে হয়, কাজেই সেটার চালনা খুব বেশি হয়। চালনার দ্বারা শক্তি বাড়ে।
কোন জিনিসটা কিরূপ পরীক্ষা করিতে হইলে, তাহার উপর হাত বুলাইয়া দেখ। এইরূপ ক্রমাগত হাত বুলাইয়া তাহাদের স্পর্শ শক্তিটা আমাদের চাইতে অনেক প্রখর হয়। অন্ধকে মুখে হাত বুলাইয়া মানুষ চিনিতে স্বচক্ষে দেখিয়াছি। আমরা তাহাতে পারিনা, কারণ আমাদের স্পর্শ শক্তি তেমন চালনা হয় নাই। অক্ষর যদি কালিতে লেখা না হইয়া খোদা হয়, তবে অন্ধ তাহাতে হাত বুলাইয়া, সহজেই তাহার চেহারাটা মনে করিয়া লইতে পারে। অক্ষরগুলি খোদা না হইয়া, উঁচু হইলে আরো সুবিধা হয়।
অন্ধদের পুস্তকের অক্ষর সব উঁচু-উঁচু। অন্ধরা তাহাতে হাত বুলাইয়া বেশ পড়িয়া যাইতে পারে। তবে আমরা যেমন ছোট-ছোট অক্ষর পড়িতে পারি, অন্ধেরা তাহা পারে না। তাহাদের খুব বড়-বড় অক্ষরের দরকার হয়। তোমাদের জন্যে যেমন ‘সখা ও সাথী’ বাহির হইয়াছে, অন্ধদের জন্য ইহারা ষোলো-সতেরো খানার মতন এক-একখানা ‘সখা ও সাথী’ বাহির করিলে, তবে ইহার সকল কথা তাহাতে ধরিত।
অন্ধদের জন্য নানাপ্রকার লিখিবার প্রণালী বাহির হইয়াছে। মুন সাহেব সেগুলির দোষগুণ বিচার করিয়া, তার চাইতে অনেক সহজ উপায় স্থির করিয়াছেন। এই নূতন উপায়ে এখন বিস্তর ছাপা হইতেছে। তোমরা স্কুলে যতরকম বই পড়, তাহার সবই এখন অন্ধরা পড়িতে পারে—তোমাদের অঙ্ক, ব্যাকরণ, ইতিহাস, ভূগোল, ইত্যাদি সব। অন্ধেরা ম্যাপ দেখে, ছবি দেখে, স্বরলিপি দেখিয়া গান শিখে, সব ঐরূপে উঁচু-উঁচু করিয়া লেখা। তোমরা চোখে দেখ, তাহারা হাত বুলাইয়া দেখে।