পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 অন্ধদের জন্য যে ছবি প্রস্তুত করা হয়, তাহা তোমাদের ছবির মতো নহে। তাহাদের কোনোরকম রঙ নাই, একটি কালো লাইন পর্যন্তও নাই। যাহারা জন্মান্ধ তাহারা তো কখনো রঙ দেখে নাই, সুতরাং তাহা যে কেমনতর তাহা তাহারা মনেও করিতে পারে না। এ সম্বন্ধে মুন সাহেব যে গল্প বলিয়াছেন, তাহা বলিয়া আমার এই প্রস্তাব শেষ করিব।

 লিখিবার সময়ে আমরা যেমন লাইনের পর লাইন বাম দিক হইতে আরম্ভ করিয়া ডাইনে শেষ করি, অন্ধদের তাহাতে ভারি অসুবিধা হয়। ওরূপ লেখা পড়িতে তাহারা সহজেই পথ হারাইয়া ফেলে। অন্ধদের লাইন একটি আমাদের লাইনের মতন বাম হইতে ডাইনে, তার পরেরটি পারসীর মতন ডান হইতে বামে, তার পরটি আবার বাম দিক হইতে ডাইনে, এইরূপ করিয়া লেখা হয়। এরূপ হইলে, যেখানে একটি লাইন শেষ হইল, সেইখানেই আরেকটি লাইনের গোড়া পাওয়া গেল, খুঁজিয়া বেড়াইবার আর দরকার হয় না। মুন সাহেবের সেই গল্প আমরা অন্ধদিগের কায়দায় লিখিতেছি। মুন সাহেব বলিতেছেন—

‘অন্ধ হইবার পূর্বে আমার কুড়ি বৎসর বয়স হইয়াছিল, তাই কোন কিরকম চেহারা বাড়ির, দেখাইত কেমন সব জন্তু মানুষ ছিল কেমন রঙটা ছিল, সবই আমার বেশ মন আছে; কিন্তু আমি একটি মেয়েকে জানিতাম, পা চারি ঘোড়ার যে করিত মনে সে। ছিল অন্ধ অবধিই জন্মিয়া সে তাহার দুটিতে ভর করিয়া সে চলে। আর দুটিকে আমাদের হাতের মতন, করিবার প্রস্তুত ছবি জন্য অন্ধদিগের হইতেই ইহা। রাখে তুলিয়া করিয়া কথা আমার মনে হয়। আমি আমাদের বই লেখার মতন করিয়া উঁচু মেয়েটি অন্ধ সেই। করিলাম প্রস্তুত ছবি বাড়ির একটি দিয়া লাইন প্রথমে মনে করিল সেটা একটা জন্তু, সে কিনা পৃথিবীর কোনো জিনিসই আর সঙ্গে তাহার কিন্তু। করিয়াছিল মনে ওরূপ তাই নাই দেখে কখনো একজন ছিলেন, তিনি অল্পদিন যাবৎ অন্ধ হইয়াছেন। তিনি ছবি খানির একটা এযে মেয়ে বোকা! লিজি উঠিলেন বলিয়া বুলাইয়াই হাত উপর বাড়ি, বেশ বড় বাড়ি।’

সখা ও সাথী—১৩০১


বান ডাকা

 এদেশের অনেক নদীতে জোয়ার ভাঁটা দেখা যায়। চবিবশ ঘণ্টার ভিতর দুবার করিয়া সমুদ্রের জল বাড়ে আর কমে, তাহাকেই জোয়ার আর ভাঁটা বলা হয়। যে-সকল নদীর সঙ্গে সমুদ্রের যোগ আছে, সমুদ্রের জোয়ারের জল তাহাতে প্রবেশ করিয়া তাহার ভিতরেও জোয়ার ভাঁটা জন্মায়। তখন নদীর স্রোত কমিয়া যায়, অথবা একেবারে ফিরিয়াই যায়। কোনো কোনো নদীতে ‘বান’ ডাকে।

 ‘বান ডাকা’ কাহাকে বলে জান? সমুদ্রের জল নদীতে প্রবেশ করিবার সময় কখনো কখনো নদীর জলের চাইতে অনেকখানি উঁচু হইয়া আসে, ইহাকেই বলে ‘বান ডাকা’। বানের মুখে নৌকা পড়িলে ভারি মুস্কিল, সুতরাং ঐ সময়ে নৌকার মাঝিরা ভারি ব্যস্ত হয়। ঘাটে যে-সকল লোক স্নান করে, বান ডাকিবার সময় তাহারা তাড়াতাড়ি ডাঙ্গায় উঠিয়া