পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৬৫

এই বিষয়ের অতি সামান্য একটু চর্চা করিতে পারি, তাহাতেও যথেষ্ট আনন্দ আছে।

 আকাশকে আমরা সচরাচর যেমন করিয়া দেখি, তাহাতে তাহার সম্বন্ধে বেশি কথা জানিবার সম্ভাবনা নাই। তাহাকে রোজ দেখিতে হয়, আর খুব সতর্ক হইয়া দেখিতে হয়। এইরূপ করিয়া কিছুদিন দেখিলেই অনেক আশ্চর্য কথা জানিতে পারিবে।


আকাশের কথা ঃ ২

 শুধু চোখে আকাশের যতখানি দেখা যায়, তাহার সম্বন্ধে আজ দুই-একটি কথা বলিব। আকাশে আমরা সচরাচর সূর্য, চন্দ্র, তারা ইত্যাদিকে দেখিতে পাই। মাঝে মাঝে এক-একটা ধুমকেতুও দেখা দেয়। সূর্য, চন্দ্র, ইত্যাদিকে চিনাইয়া দিবার বোধহয় দরকার হইবে না, ধুমকেতু আসিলে তাহাকে চিনিবার যথেষ্ট অবসর পাওয়া যাইবে।

 তারাগুলি নিতান্তই ছোট-ছোট, আর ইহাদের সংখ্যাও খুব বেশি। কিন্তু তাই বলিয়া ইহাদিগকে চিনিবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি হয় নাই। অতি প্রাচীনকাল হইতেই লোকে ইহাদের কথা জানিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া আছে। আগে অনেকে বিশ্বাস করিত যে, ঐ তারাগুলি আর কিছুই নহে, ধার্মিক লোকের আত্মা। মহাভারতে ইহার প্রমাণ দেখিতে পাওয়া যায়। একবার ইন্দের সারথি মাতলি অর্জুনকে রথে করিয়া স্বর্গে লইয়া যাইতেছিলেন।[] পৃথিবী ছাড়িয়া আকাশের ভিতর দিয়া যাইবার সময়, অর্জুন অনেকগুলি উজ্জ্বল মানুষ দেখিতে পাইলেন। তিনি আশ্চর্য হইয়া মাতলিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহারা কে?’ তাহাতে মাতলি বলিলেন, তুমি পৃথিবী হইতে যে-সকল তারা দেখিয়াছ ঐ তারাসকল পুণ্যবান লোক। পৃথিবীতে থাকিতে তাঁহারা যে সকল সৎকার্য করিয়াছে, তাহার ফলে তাঁহারা এখন তারা হইয়াছে।

 প্রাচীন গ্রীক পুরাণে পার্সিয়ুস এবং আণ্ড্রোমীডার গল্প আছে। আণ্ড্রোমীডা রাজকন্যা ছিলেন। মহারাজ কীফিয়ুস তাহার পিতা, রানী কাসিয়োপিয়া তাঁহার মাতা। বিনা দোষে আণ্ড্রোমীডার হাত-পা শিকলে বাঁধিয়া, একটা সামুদ্রিক রাক্ষসের আহারের জন্য তাহাকে সমুদ্রের ধারে ফেলিয়া রাখা হইয়াছিল। মহাবীর পার্সিয়ুস অনেক অসাধ্য সাধন করিয়া তাঁহাকে সেই বিপদ হইতে উদ্ধার করেন, এবং তৎপর তাঁহাকে বিবাহ করেন। প্রাচীন গ্রীক পুরাণে লিখিত আছে যে, ইহাদের মৃত্যুর পর গ্রীক-দেবতা আথেনী, ইহাদিগকে আকাশে তুলিয়া লয়েন। আজও পরিষ্কার রাত্রিতে তাঁহাদিগকে সেখানে দেখিতে পাওয়া যায়। আণ্ড্রোমীডার হাত-পা বাঁধা, পার্সিয়ুসের যুদ্ধের বেশ। কীফিয়ুস দণ্ড হাতে মুকুট মাথায় রাজকাজে নিযুক্ত, কাসিয়োপিয়া হাতির দাঁতের চেয়ারে বসিয়া চুল আঁচরাইতে ব্যস্ত।

 পৃথিবীর যেমন ম্যাপ আছে, আকাশেরও তেমনি ম্যাপ আছে। পৃথিবীতে যেমন নানাদেশ আর নানান সমুদ্র, আকাশেও তেমনি অনেকগুলি নক্ষত্রমণ্ডলী (Constellation) কল্পনা করা হইয়াছে। এই-সকল নক্ষত্রমণ্ডলীর প্রত্যেকটার এক একটা নাম আছে। সে-সকল নাম শুনিলে হয়তো তোমাদের হাসি পাইবে। মানুষের নাম আর জন্তুর নাম তাহাতে বেশি, মাঝে মাঝে দুই একটা জিনিসপত্রের নামও দেখা যায়। মানুষের মধ্যে পার্সিয়ুস, আণ্ড্রোমীডা, কীফিয়ুস, কাসিয়োপিয়া, ওরায়ণ, হার্কিউলিস্ ইত্যাদির নাম দেখা যায়। জন্তুর মধ্যে বড় সিংহ, ছোট সিংহ বড় ভল্লুক, ছোট ভল্লুক, বড় কুকুর, ছোট কুকুর, ষাঁড়, ভেড়া, ছাগল,

  1. মহাভারত, বনপর্ব: ইন্দ্রলোকাভিগমন পর্বাধ্যায়।