পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই ছায়াপথ আমাদিগকে ঘিরিয়া রহিয়াছে আমরা ইহারই ভিতরে বাস করিতেছি। আকাশের রাজ্যে যেমন দূরের জিনিস লইয়া কারবার, তাহাতে এ কথা সহজেই মনে হয় যে, আমরা হয়তো ঐ ছায়াপথেরই লোক। আমাদের সূর্য হয়তো এই ছায়াপথেরই একটি অতি গরিব অধিবাসী!


আকাশের কথা ঃ ৩

 যদিও আমরা এখন ঘরে কথা বলিতে বসি নাই, তথাপি একটা কথা বলিলে তত দোষের হইবে না। প্রথম রাত্রিতে যে-সকল উজ্জ্বল তারা দেখা যায়, তাহাদের তিনটি গ্রহ। একটি লালচে রঙ্গের, সেটিকে পশ্চিমে দেখা যায়, আর প্রথম রাত্রিতেই সে অস্ত যায়। এটি মঙ্গলগ্রহ। ইংরাজিতে ইহার নাম Mars। আর-একটি প্রথম রাত্রির তারার মধ্যে সকলের চাইতে বড়। ইহার নাম বৃহস্পতি (Jupiter)। গ্রহদের মধ্যে এইটিই সকলের চাইতে বড়। এই গ্রহটি মঙ্গলের কিছু পরে অস্ত যায়। আকাশের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে উহার খোঁজ লইবে। আর-একটি গ্রহ ছায়াপথের উপরে। ইহার নাম শনি (Saturn)। দূরবীন দিয়া দেখিবার পক্ষে ইহার মতন সুন্দর জিনিস আর আকাশে নাই। এইসকল গ্রহকে আকাশের দক্ষিণ ভাগে দেখিতে পাইবে।

 আজকালকার প্রথম রাত্রির আকাশে সম্প্রতি আমাদের পরিচয় করিবার উপযুক্ত বেশি জিনিস নাই। কিন্তু যদি রাত্রিতে জাগিতে পার, তাহা হইলে কয়েকটা দেখিবার আছে।

 রাত্রি প্রভাত হইবার কিঞ্চিৎ পূর্বে উঠিলে পূর্বদিকের আকাশে দুটা খুব উজ্জ্বল তারা দেখিতে পাইবে। ইহাদের মধ্যে যেটা বেশি উজ্জ্বল, সেটা নক্ষত্র নহে, গ্রহ। ইহাকেই শুকতারা (Venus) বলে। শুকতারার চাইতে কম উজ্জ্বল যেটা, সেটার নামই সিরিয়স। নক্ষত্রের মধ্যে এইটাই সকলের চাইতে উজ্জ্বল।

 সিরিয়সের খুব কাছেই ছায়াপথটাকে বেশ পবিষ্কার দেখিতে পাওয়া যাইবে। আচ্ছা, ওটাকে ধরিয়া ক্রমাগত উত্তর দিকে যাই। অবশ্য, ঠিক উত্তর হইবে না, মোটামুটি উত্তর।

 খানিক দূর গেলেই দেখিবে যে অনেকগুলি উজ্জ্বল তারা মিলিয়া এই ছবির[১] একস্থানের মতন দেখিতে হইয়াছে। এইনক্ষত্রমণ্ডলীকে প্রায় সকলেই চিনে। ইহার বাঙ্গালা নাম কালপুরুষ, ইংরাজি নাম ওরায়ণ (Orion)। অনেকে ইহাকে আদম সুরৎও বলে। মোটামুটি ইহাকে দেখিতে একটা মানুষের মতন। চারি কোণের চারিটা তারা যেন হাত-পা। একটা কোমরবন্ধও আছে তাহাতে আবার একটা তলোয়ার ঝুলিতেছে। খুব যোদ্ধা, তাহাতে আর সন্দেহ নাই।

 আকাশের একটা ম্যাপ দেখিলে দেখিতে পাইবে যে, তাহাতে ওরায়ণের চেহারা দেওয়া হইয়াছে। উহা কাল্পনিক বলিয়া এখানে তাহা দেওয়ার বিশেষ দরকার বোধ হইতেছে না। কিন্তু ম্যাপের সেই ছবিখানি দেখিতে হাসি পায়। ওরায়ণের বা ঁহাতে একটা জন্তুর ছাল, ডান হাতে এক প্রকাণ্ড গদা! কোথাকার এক ক্ষ্যাপা ষাঁড় শিং বাগাইয়া গুতাইতে আসিতেছে, ওরায়ণ তাহার সঙ্গে সাংঘাতিক যুদ্ধ করিতেছেন!

 ওরায়ণের কোমরবন্ধের ভিতর দিয়া একটা লাইন টানিলে তাহার একদিক সিরিয়সের কাছ দিয়া যায়, অপর দিক প্রায় ষাঁড়ের মাথায় গিয়া ঠেকে। ষাঁড়ের মাথার মধ্যে সকলের

  1. পত্রিকার পাতায় ছবিটি বিবর্ণ হয়ে যাওয়ায় দেওয়া সম্ভব হল না।