লইতে পারিলে, ধ্রুবকে বাহির করা মুস্কিল হইবে না। তবে একটু সহিষ্ণুতার ও সাবধানতার প্রয়োজন হইবে, কারণ ধ্রুব বেশি উজ্জ্বল তারা নহে।
ঠিক খাড়া জিনিসের ছায়া বেলা ঠিক বারোটার সময় যেদিকে পড়ে সেইটা উত্তরদিক। দড়ির আগায় ভার বাঁধিয়া ঝুলাইলে সেই দড়িকে ঠিক খাড়া মনে করা যায়। বারোটার সময় ঐরূপ দড়ির ছায়া কোথায় পড়ে, তাহা খড়ি দিয়া চিহ্নিত করিয়া লইবে। রাত্রিতে ঐ খড়ির দাগ দেখিয়া উত্তর দিক স্থির করিবে। তারপর ধ্রুবতারা খুঁজিয়া বাহির করিবে।
প্রাচীনকালে দিগদর্শন যন্ত্র ছিল না। তখনকার নাবিকেরা ধ্রুবতারা দেখিয়া দিক স্থির করিত।
আমরা ধ্রুবকে আকাশের প্রান্ত হইতে অনেকখানি উপরে দেখিতে পাই। তোমরা যদি ধ্রুবকে খুঁজিয়া বাহির করিতে পার, তবে দেখিবে যে, ধ্রুব হইতে আকাশের প্রান্তের মধ্যে যে তারাগুলি আছে তাহাদেরও উদয় অস্ত নাই।
আকাশের কথাঃ ৪
নক্ষত্রগুলিকে হঠাৎ দেখিলে মনে হয়, যেন উহাদের সংখ্যা নাই, কিন্তু একটু মনোযোগ করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারিবে যে, প্রথমে যত বেশি বলিয়া মনে হয়, বাস্তবিক তত বেশি নক্ষত্র আমরা দেখিতে পাইনা।
শুধু চোখে যাহা দেখা যায়, তাহার কথাই বলিতেছি দূরবীন দিয়া যাহা দেখা যায়, তাহার কথা নহে। যাহাদের দৃষ্টি খুব প্রখর, তাহারও একবারে চার-পাঁচ হাজারের বেশি নক্ষত্র দেখিতে পায় না। চার-পাঁচ হাজার নক্ষত্র আর তেমন একটা বেশি কি? ইহাদিগকে গণিয়া, চিনিয়া, আঁকিয়া খাতায় লিখিয়া কবে শেষ করা হইয়াছে। একখানা সাধারণ বড় ম্যাপে গ্রামগুলি যেমন ঘেঁষাঘেঁষি থাকে, আকাশে নক্ষত্র সকলকে তাহার চাইতে বরং কম ঘেঁষাঘেঁষি দেখা যায়।
আমাদের সূর্যও যে একটা নক্ষত্র, এ কথা পূর্বেই বলা হইয়াছে। সূর্য আমাদের এত কাছে বলিয়াই তাহার এত সম্মান। কিন্তু ঐ নক্ষত্রগুলির ভিতরে এর চাইতে ঢের বড় বড় সূর্য আছে। উহাদের একটা আমাদের কাছে আসিলে, আমরা হয়তো পুড়িয়াই মরিতাম। আর, আমাদের সূর্য ঐ নক্ষত্রগুলির কাছে গেলে, হয়তো আমরা তাহাকে দেখিতেই পাইতাম না।
জিনিস যত দূরে থাকে, ততই ছোট দেখায়। থালাখানাকে দূরে লইয়া গেলে, তাহা রেকাবীখানার মতন দেখায়। আরো দূরে নিলে হয়তো টাকাটির মতন দেখাইবে। এইরূপে তাহাকে যত দূরে লইয়া যাওয়া যায়, ততই সে ক্রমে আধুলিটির মতন, তারপর সিকিটি, তারপর দুয়ানিটি, তারপর আলপিনের মাথাটির মতন ছোট হইয়া, শেষে একেবারেই অদৃশ্য হইয়া যাইবে। এক ফুট চওড়া থালাখানাকে এক মাইল দূরে লইয়া গেলে, তাহাকে আর দেখিতে পাওয়া যায় না। মোটামুটি বলিতে গেলে, যে জিনিস যত লম্বা চওড়া, তাহার পাঁচ হাজার গুণ দূরে লইয়া গেলে, তাহাকে আর দেখিতে পাওয়া যায় না।
ইহার মধ্যে একটা কথা আছে। এক ফুট চওড়া থালাখানিকে এক মাইল দূর হইতে দেখিতে পাইবে না;কিন্তু একটি উজ্জ্বল আলো জ্বলিলে তাহাকে এক মাইলের চাইতে ঢের বেশি দুর হইতেও দেখা যায়। তখন আমরা যে বাস্তবিকই আলোর শিখাটা অবধি দেখিতে পাই তাহা নহে; আমরা উহার ঝিকিমিকিটুকু মাত্র দেখি। আলোকের শিখাটি সে অদৃশ্য হইয়া যাইবে; তারপর যাহা দেখিব, সে কেবল উহার জ্যোতি-আসল জিনিসটা নহে।