কিন্তু খুব দূরের কথা যখন ধরা হয়, তখন দেখা যায় যে, তত দূরে আলো চলিয়া যাইবার সময়ের একটা বেশ মোটা হিসাব দাঁড়ায়।
সূর্য হইতে আলো পৃথিবীতে আসিতে সাড়ে সাত মিনিট সময় লাগে। সূর্য যদি আগে থাকিত আর এখন হঠাৎ দপ করিয়া জ্বলিয়া উঠিত, তবে আমরা আরো সাড়ে সাত মিনিট পরে তাহাকে দেখিতে পাইতাম। এখন যদি হঠাৎ সূর্য নিবিয়া যায়, তবে আরো সাড়ে সাত মিনিট পর্যন্ত আমরা এই দুর্ঘটনার কোনো খবর পাইব না। এই মুহূর্তে আমরা সূর্যকে যেমন দেখিতেছি, তাহা তাহার সাড়ে সাত মিনিট আগেকার চেহারা।
আলোক এক সেকেণ্ডে একলক্ষ ছিয়াশিহাজার তিনশত মাইল যায়। এইরূপ করিয়া সওয়া চার বৎসর চলিলে, তবে সে সকলের চাইতে কাছে তারা হইতে পৃথিবীতে পৌঁছাইতে পারিবে। ধ্রুবতারা হইতে পৃথিবীতে পৌঁছাইতে তাহার চুয়াল্লিশ বৎসর লাগে। এইরূপ, যে তারা যত দূরে, সেখানকার আলো পৃথিবীতে পৌঁছাইতে তত বেশি সময় চাই। এত দূরেও নিশ্চয় তারা আছে যে তাহার জন্মের সময় হইতে চলিতে আরম্ভ করিয়াও তাহার আলো এ পর্যন্ত পৃথিবীতে পৌঁছাইতে পারে নাই। আজ যদি সেই আলো আসিয়া এখানে পৌঁছয়, আর আমরা তাহাকে দেখিতে পাই, তবে মনে করিতে হইবে যে, এ তাহার আজিকার চেহারা নহে সেই সে যখন জন্মাইয়াছিল, তখনকার চেহারা।
পৃথিবী যখন জন্মাইয়াছিল, তখন হইতেই তো তাহার আলো চারিদিকে ছুটিয়া চলিয়াছে। উহার জন্মের সময় হইতে যে আলো রওয়ানা হইয়া গিয়াছিল, তাহা না জানি এত দিনে কোথায় গিয়া পৌছাইয়াছে। মনে কর, সেখানে বুদ্ধিমান জীব আছে, আর তাহাদের ভয়ংকর এক-একটা দূরবীন আছে সেই দূরবীন দিয়া যেন এই পৃথিবীর মানুষকে ঠিক একটা মানুষের মতনই বড় দেখা যায়। সেখানকার পণ্ডিতেরা দূরবীন দিয়া কিরকম পৃথিবী দেখিতে পাইতেছে? সেই তাহার জন্মের সময় পৃথিবী যেমন ছিল, তাহারা তাহাই দেখিতেছে। এখানকার এই নদনদী, পাহাড় পর্বত, দেশ গ্রাম, জাহাজ, রেল, এ-সকলের কিছুই তাহারা দেখিতেছে না। তাহারা হয়তো দেখিতেছে, একটা প্রকাণ্ড ধোঁয়াটে জিনিস, আর সেটা হয়তো ঐ সূর্যের মতন ধু ধু করিয়া জ্বলিতেছে!
উহার চাইতে ঢের কাছে যদি কেহ সেইরূপ ভয়ংকর দূরবীনওয়ালা থাকে, সে হয়তো পৃথিবীকে ইথিয়োসরস, প্লীসিয়োসরস ইত্যাদি জন্তুতে পরিপূর্ণ দেখিবে!
সূর্যে যদি তেমন কেহ থাকে, তবে সে হয়তো, তুমি জল খাবার খাইয়া আঁচাইতে যাইবার সময় দেখিবে যে, তুমি এই সবে খাইতে বসিতেছ।
দূরবীন
হ্যান্স লিপার্সী নামক একজন ওলন্দাজ চশমাওয়ালা প্রথমে দূরবীক্ষণ প্রস্তুত করে। সেই সময়ে গ্যালিলিও নামক ইটালী দেশীয় বিখ্যাত জ্যোতির্বেত্তা বাঁচিয়া ছিলেন। তিনি ঐ দূরবীক্ষণের কথা শুনিয়া নিজে ঐরূপ একটি দূরবীক্ষণ প্রস্তুত করিলেন।
তখনকার দূরবীক্ষণগুলি অবশ্য নিতান্তই ক্ষুদ্র ছিল। কিন্তু ঐ দূরবীক্ষণ দিয়াই গ্যালিলিও আকাশের সম্বন্ধে এমন সকল কথা জানিতে পারিয়া ছিলেন, যে লোকে তাহা শুনিয়া আশ্চর্য হইয়া গিয়াছিল। এমন কি, অনেকে তাহা বিশ্বাস করিতে না পারিয়া গ্যালিলিওকে