পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৭৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভিতর দিয়া আমাকে দেখিলে দেখিবে আমার পা উপর দিকে মাথা নীচের দিকে।

 আকাশ দেখিবার সময় ঐরাপ আই পীস ব্যবহারে কোনো দোষ হয় না;কিন্তু পৃথিবীর গাছপালা, মানুষ, গোরু, বাড়িঘর ইত্যাদিগকে উলটা দেখিতে একেবারেই ভালো লাগে না। সুতরাং পৃথিবীর জিনিসপত্র দেখিতে হইলে যাহাতে সোজা দেখা যায়, তাহার বন্দোবস্ত করিতে হয়। এইজন্য আরো অন্তত দুখানি কাচের প্রয়োজন। ইহা ছাড়াও ভালো করিয়া দেখিতে হইলে শুধু একখানি কাচের আই পীসে সকল সময় কাজ চলে না। সুতরাং আকাশ দেখিবার জন্য সচরাচর দুখানি কাচের আই পীস ব্যবহার হয়। অবশ্য তাহাতেও জিনিস উলটাই দেখা যায়; কিন্তু হইলেও, দেখায় বেশ পরিষ্কার।

 খানিক আগে যে আরশিওয়ালা আর কাচওয়ালা দূরবীনের কথা বলিতেছিলাম, এখন তাহার অর্থ বেশ বুঝিতে পারবে। আমরা সচরাচর যে-সকল দূরবীন দেখিতে পাই, তাহা কাচওয়ালা দূরবীন;কেন না,ইহাদের অবজেক্ট গ্লাস কাচের। অবজেক্ট গ্লাসের কাজ, দূরবীনের ভিতরে জিনিসের ছবি তৈয়ার করা। এই কাজ আরশি দ্বারাও হইতে পারে। সুতরাং এমন দূরবীনও হয়, যাহাতে অবজেক্ট গ্লাসের বদলে একখানি আরশি আছে। তাহাকেই বলে আরশিওয়ালা দূরবীন।

 এই-সকল কাচ এবং আরশি প্রস্তুত করা যে বড়ই কঠিন কাজ, এ কথা বলিয়াছি। যে কোনোরকমের একটা আরশি বা কাচ হইলেই তো হইল না, ইহার একটা বিশেষ গড়ন আছে। আরশিখানির গড়ন সরার ন্যায়—মাঝখানটায় গর্ত। কাচ দুখানি গোল—তাহাদের একখানার মাঝখানটা পুরু ধার পাতলা, আর একখানার পাশ পুরু মাঝখানটা পাতলা। আর কোন জায়গায় কতখানি পুরু, বা কতখানি পাতলা, বা কতখানি গর্ত, এ-সকলের হিসাবও যেমন তেমন হিসাব নহে।

 সুতরাং কাজ কঠিন হইবারই কথা। আরশির বেলা পরিশ্রম অনেক কম কারণ তাহার একপিঠ গড়িতে পারিলেই হইল। কিন্তু কাচ দুখানিতে চারিটি পিঠ সুতরাং তাহাতে চারিগুণ পরিশ্রম। এত পরিশ্রমের অর্থ ঢের খরচ এ কথা সহজেই বুঝিতে পার। একটা বড় দূরবীনের কথা যদি বলি, তাহা হইলে কথাটা আরো পরিষ্কার বুঝিতে পারবে।

 একটা খুব বড় দূরবীক্ষণের ছবি দেওয়া গেল।[১] আমেরিকার কালিফর্ণিয়া দেশে হ্যামিল্টন পর্বতের উপরে একটি মানমন্দির (অর্থাৎ নক্ষত্র দেখিবার আফিস) আছে। এই মানমন্দিরের নাম লিক মানমন্দির। এই মানমন্দিরে একটি বড় দূরবীক্ষণ আছে।

 দূরবীনটির নলটি প্রায় ৫৭ ফুট লম্বা। বড় কাচখানি (অবজেক্ট গ্লাস) তিনফুট চওড়া। যে স্তম্ভের উপরে দূরবীনটি আছে, তাহ ৩৮ ফুট উঁচু।

 আটত্রিশ ফুট উচুতে দূরবীন থাকিলে দেখিবার সময় খুব মুস্কিল হয় না? আকাশের মাঝখানের অর্থাৎ আমাদের মাথার উপরের কোনো জিনিস দেখিতে হইলে বেশি মুস্কিল না হইতে পারে, কারণ তখন দূরবীনের গোড়ার দিকটা আমাদের চোখের খুব কাছে থাকে কিন্তু দেখিবার জিনিসটি যদি আকাশের এক পাশে থাকে, তবে তো তাহার দিকে দূরবীন ফিরাইতে গেলেইতাহার গোড়ার দিকটা ভয়ানক উঁচুতে উঠিয়া যাইবে, তখন কি মইদিয়া উঠিয়া দেখিতে হইবে নাকি? মই দিয়া উঠিয়া যে না দেখা যায় এমন নহে। কিন্তু এরূপ করিয়া বেশি উঁচুতে


  1. পত্রিকার পাতায় ছবিটি বিবর্ণ হয়ে যাওয়ায় দেওয়া সম্ভব হল না।