পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মতন শরীর পাতিয়া দিলেও বিপদের আশঙ্কা আছে। ঢেউ আসিয়া উপস্থিত হইলে তাহাকে বাম পাশ এবং ঘাড় পাতিয়া লইতে হয়। লাফাইতে আপত্তি না থাকিলে ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে লাফাইয়া শরীরকে উহার সমান উঁচু রাখিতে পারিলেও ছোট ছোট ঢেউয়ের সময় কাজ চলিয়া যায়। বড় ঢেউ হইলে ডুব দিয়া উহার নিচে চলিয়া যাওয়াই যুক্তিসঙ্গত। ঢেউ অধিক উচু হইলে শেষে ফাটিয়া যায়। এই ফাটিবার সময় উহা হইতে বিশেষ বিপদের আশঙ্কা। এই সময়ে উহা হইতে দূরে থাকিয়া অথবা আগেই উহার নিচে চলিয়া গিয়া আত্মরক্ষা করিতে হয়। ফাটিবার পূর্বে ঢেউ হইতে কোনো ভয় নাই—অবশ্য যাহারা সাঁতার জানে তাহদের পক্ষে। যাহারা সাতার জানে না, তাহদের জলে না নামাই ভালো। সাতার না জানিয়া জলে নামার বিপদ এই যে, অল্প জলও অনেক সময় হঠাৎ অধিক জল হইয়া যায়। তখন সীতার ভিন্ন আত্মরক্ষার উপায় থাকে না। তাহা ছাড়া হাজার সতর্ক হইলেও নাড়াচাড়ার হাত এড়াইবার সাধ্য নাই। বড়-বড় ঢেউ এক একটা এমন আসে, যে তাহার সামনে আর কিছুতেই গাম্ভীর্য রক্ষা করা যায় না। সে আসিয়া তোমাকে লাটিমের মতন ঘুরাইয়া দিবে, ময়দার মতন ঠাসিয়া দিবে, তোমার অতিশয় গম্ভীর মুখখানি কখন হা করিয়া ফেলিবে, তাহা তুমি টেরও পাইবে না;ততক্ষণে সেরখানেক লোনাজল তোমার উদরস্থ হইয়া অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য তোমার মনের শান্তি নষ্ট করিয়া ফেলিবে।

 কেহ জিজ্ঞাসা করিতে পারেন যে, যদি এমনি, তবে সে কাজ করিতে যাওয়া কেন?’ ইহার উত্তরে অনেক কথা বলা যায়।

 প্রথমত যে পুণ্য করিতে আসিয়াছে, সে লাঞ্ছনার জন্য প্রস্তুত হইয়া আসিয়াছে। তাহার পুণ্য চাই লাঞ্ছনা হইলে তাহাতে বরং পুণ্যের দাম বাড়িবে।

 স্বাস্থ্যের জন্য যে আসিয়াছে সে অবশ্য জল বাড়িতে লইয়া গিয়া তাহাতে স্নান করিতে পারে; কিন্তু তাহাতে উপকার কম। ঐ নাড়াচাড়ায় উপকার বেশি।

 আর ঐ লাঞ্ছনার জন্যই যে আসিয়াছে, তাহাকে ওরূপ প্রশ্ন করা তো স্পষ্টই অনাবশ্যক বোধ হইতেছে। ঐ লাঞ্ছনার ভিতরে ভারি একটা আমোদ আছে। চল্লিশ-পঞ্চাশ বৎসরের বুড়োরা ঐ জলে পড়িয়া নাকাল হয়, আবার চ্যাচাইয়া হাসেও। ঢেউয়ের পর ঢেউ মাথার উপর দিয়া যাইতেছে শরীরটাকে ধোপার বাড়ি দিবার ফল অনেকক্ষণ যাবৎ হইয়া গেছে;তথাপি তাহারা উঠিতে চাহেনা। তাহার কারণ এই যে, এই নাড়াচাড়াতে তাহাদের শরীর মনে এমন একটা স্ফূর্তি আনিয়া দিতেছে যে অতি অল্প অবস্থায়ই তাহ লাভ করা যাইতে পারে।

 আমি জানি, অনেকে ইহার উলটা কথা বলেন। সমুদ্রে স্নান করিলে নাকি তাহদের গা চট্চট্‌ করে, আর চুলে নাকে মুখে কানে বালি ঢোকে, কাজেই সমুদ্রে স্নান সারিয়া আবার ঘরে আসিয়া তাহদের পরিষ্কার জলে গা ধুইতে হয়। হইতে পারে, কিন্তু আমি ওরূপ কোনো অসুবিধা ভোগ করি নাই, আর তাহদের কেন যে ওরূপ হয়, তাহারও একটি ভিন্ন অন্য কারণ খুঁজিয়া পাই নাই। সে কারণটি এই। অনেকে হয়তো সীতার জানেন না, অথবা জানিলেও হয়তো তাহারা খুব সতর্ক লোক, অধিক জলে নামিতে ইচ্ছা করেন না। ইহারা যেখানে কোমর জলের বেশি হয় না, এইরূপ জায়গায় দাঁড়াইয়া স্নান করেন। ঢেউ যখন আসে, তখন ওখানে ঐ পরিমাণ জল হয়;কিন্তু ঢেউ চলিয়া সে স্থান একেবারেই শুকাইয়া যায়। এরূপ করাতে আশঙ্কার কারণ খুবই কম; কারণ কোমর জলে যে ডুবিয়া মরিবে,