দিকে যে চলে তাহা নহে, সে চলিবে পাশাপাশি—দেখিলেই তাড়া করিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু তাড়া করিতে গেলে দেখা যায় যে তাহাকে ধরা কাজটি বড় সহজ নহে। তুমি খুব চট্পটে শয়তান গোছের লোক হইলে অবশ্য শেষে তাহকে ধরিতে পার, কিন্তু তাহার পূর্বে সে তোমাকে একশো ফাকি দিয়া হাজার ঘুরপাক খাওয়াইয়া তবে ছড়িবে।
এই জাতীয় কাঁকড়া যেমন ছুটতে পারে, তেমনি আবার এমন কাঁকড়া ও আছে যে তাহারা ছুটিবে দূরে থাকুক, শুকনো মাটিতে চলিতেই পারে না। একদিন সমুদ্রের ধারে গিয়া দেখি যে ইহাদের একজন চিৎপাত হইয়া পড়িয়া আছেন। দেখিতে বেশ গাট্টা-গোটা জোয়ান কাঁটালের মতন কাঁটাওয়ালা খোলা পরিয়া সঙ্গিন সিপাই সাজা হইয়াছে। কিন্তু এদিকে দুরবস্থার একশেষ। কখন কে চিৎ করিয়া রাখিয়া গিয়াছে তদবধি সেইভাবেই রহিয়াছেন; সোজা হইবার শক্তিটুকু নাই। দেখিয়া আমার হাসিও পাইল, দয়াও হইল। চেহারাটি আবার অতিশয় উৎকট, গায় হাত দিতে ভরসা হয় না। সুতরাং আমি ছাতার আগা দিয়াই উলটাইয়া দিলাম। কিন্তু খালি উলটাইয়া দিলে কি হইবে, যদি হাঁটিবার ক্ষমতা না থাকে। নৌকার দাড়ের মতন কখানি পা; তাহাতে সাঁতার কাটিবার পক্ষে যতই সুবিধা হউক, ডাঙ্গায় চলার কাজ একেবারেই চলে না। দুই পা না যাইতে যাইতেই আবার ডিগবাজি খাইয়া যেই চিৎ সেই চিৎ। ইহার পরে ঐরূপ আরো অনেক কাকড়া জেলেদের জালে ধরা পড়িতে দেখিয়াছি, এ কাঁকড়া কেহ খায় না, সুতরাং জেলেরা এগুলিকে ফেলিয়া দেয়। যেটাকে যেখানে ফেলে, সেটা আর সেখান হইতে দূরে যাইতে পারে না। কারণ হাঁটতে গেলেই উলটাইয়া যায়, আর সেইভাবেই তাহাকে পড়িয়া থাকিতে হয়। জালে আর একরকম কাঁকড়া ধরা পড়ে, তাহার স্বভাব একটু আশ্চর্য রকমের। এই কাকড়ার খোলা নাই, অথচ খোলা না থাকিলে কাকড়ার বাচিয়া থাকাই ভার হয়। তাই সে বিস্তর বুদ্ধি খরচ করিয়া বেশ এক ফন্দি ঠাওরাইয়াছে। সমুদ্রে শঙ্খ শামুক ইত্যাদির খালি খোলার অভাব নাই। এই কাকড়া এইরূপ একটা খালি খোলার ভিতরে ঢুকিয়া থাকে। নরম শরীরটির সমস্ত খোলার ভিতরে; কেবল হাত পা গুলি বাহিরে থাকে, তাহাও ইচ্ছা করিলেই গুটাইয়া লইতে পারে। এইরূপে পরের খোলা পরিয়া ইহারা জীবন কাটাইয়া দেয়, চলাফেরা সমস্তই ঐ খোলাসমেত হইয়া থাকে। যেন সেটা তার নিজেরই খোলা। আমি এইরূপ যতগুলি কাঁকড়া দেখিয়াছি, তাহদের সকলেই লম্বা-লম্বা কাঁটাওয়ালা একরকম ছোট শঙ্খের ভিতরে ছিল। কাটা থাকায় অন্য কোনো জন্তু আসিয়া খপ করিয়া তাহাদিগকে গিলিয়া ফেলিবার ভয় ছিল না। এই কাকড়ার নাম সন্ন্যাসী কাঁকড়া (Hermit carb)।
জালের আর কাঁকড়ার কথা যখন উঠিয়াছে, তখন মাছের কথাও উঠিবে। মাছ সেখানে সমুয়েও ধরা হয়, আর নদী বিল পুকুর ইত্যাদিতেও ধরা হয়। তাহাকে বলে ‘মু-ধু-র’ মাছ। ('মধুর’ পড়িও না। 'মু-ধু-র’। উড়িষ্যার সব কথাই ‘কটক বড় মড়ক'-এর মতন করিয়া উচ্চারণ করিতে হয়, হসন্তের ব্যবহার সে দেশে প্রায় নাই।) ইহা ছাড়া চিল্কা হ্রদ হইতেও মাছ আসে। নদী প্রভৃতিতে আমাদের দেশের সাধারণ মাছের মতন মাইথাকে, তাহার কথা আর বেশি করিয়া কি বলিব। চিল্কার মাছের চেহারাও অনেকটা এইরাপ সুতরাং সমুদ্রের মাছের কথাই আজ বলা যাউক।
সমুদ্রের মাছের নাম শুনিয়াই হয়তো তোমরা ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছ। মনটাকে হয়তো কত বড়-বড় জিনিসের জন্য প্রস্তুত করিয়া লইতেছে। সমুদ্রের বড়-বড় জন্তু অনেক আছে,