পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৯৯

কোনো শক্র আসিলে ফস্ করিয়া তাহার সামনে একরাশ কালি বাহির করিয়া দেয়। কালিতে জল ঘোলা হইয়া গেলে শক্রর ধাঁধা লাগিয়া যায়। ততক্ষণে সে শয়তান দমকল ফুঁকিয়া কোথায় গিয়া গা ঢাকা দেয় তাহা টেরই পাওয়া যায় না। ইহার উপরে আবার ইহাদের চলাফেরার অভ্যাস রাত্রিতেই বেশি। সুতরাং ইহাদিগকে সঙ বা ভূত পেত্নী বলিলে এমন অন্যায় আর কি হয়।

 আমি পুরীতে যেমন ছোট ছোট কট্‌ল্‌ ফিশ দেখিয়াছি, তাহাতে আমার হাসিই পাইয়াছিল। কিন্তু এই জাতীয় জন্তু বড় হইলে নিতান্তই ভয়ানক হয়। একরকম আট পেয়ে কট্‌ল্ ফিশ (octopus) আছে, তাহার এক একটা হাত পা ছড়াইলে আট-দশ ফুট জায়গা জুড়িয়া বসে। এক একটা পা-ই তার দশ-বারো ফুট লম্বা, এমন অক্টোপাসও আছে। হাতির শুঁড়ের আকৃতি এক একটা পা, তাহার ভিতর দিক দিয়া ছোট ছোট বাটির মতন একপ্রকার জিনিস সার সার সাজানো থাকে। এইসকল বাটির মতন জিনিসের প্রত্যেকটি একটি জোঁকের মুখের মতন কাজ করে। অর্থাৎ যাহাতে লাগে, তাহাকেই উহারা এমন ভয়ানক চুষিয়া ধরে যে তাহার প্রাণ পর্যন্ত চুষিয়া বাহির করিবার গতিক হয়। যাহাকে একবার ধরে, তাহার কি আর রক্ষা আছে। আট হাতে জড়াইয়া ধরিয়া একটিবার ঐ ভয়ানক টিয়া পাখির ঠোঁটের মধ্যে লইয়া ফেলতে পারিলেই বেচারার জীবন শেষ হয়। এইরূপে অক্টোপাসের হাতে পড়িয়া মানুষের প্রাণ হারাইবার কথা শুনিতে পাওয়া যায়। ছোটখাটো নৌকা কট্‌ল্ ফিশের টানে উলটিয়া গিয়াছে, এরূপ ঘটনাও ঘটিয়া থাকে।

 ঐ চোষণীগুলির সাহায্যে উহারা এমন সব অসম্ভব কাজ করিতে পারে, যে লোকে তাহা দেখিয়া আশ্চর্য হয়। নিতান্ত ছোট ফাটলের ভিতর ঢুকিয়া থাকা, নিতান্ত অসম্ভব স্থানে বাহিয়া উঠা, এ সকল এবং অন্যান্য রকমেব মানুষ বাজিকরের অসাধ্য অনেক কাজ ইহারা নিতান্ত সহজভাবে প্রত্যহই করিয়া থাকে।

 ইহারা আঙ্গুরের মতন থোকা থোকা ডিম পাড়ে। শামুকেরাও ঐরূপ করে, তবে শামুকের ডিম অবশ্য খুব ছোট-ছোট। ডিমগুলিকে কোনো নিরাপদ জায়গায় আটকাইয়া রাখিয়া কট‌্ল্ মাছ অতি যত্নে পাহারা দেয়। ইহাদের শরীরের রঙ সকল সময় একরকম থাকে না, ক্রমাগত বদলায়। যে স্থানের যেমন রঙ, উহাদের শরীবের রঙও উহারা অনেকটা সেইরূপ করিতে পারে। আমি পূর্বেই বলিযাছি যে একটি ছেলের হাতে ছোট-ছেট কট্‌ল্ মাছ দেখিয়াছিলাম। আর সে বলিয়াছিল যে উহা রাঁধিয়া খাইবে। অনেকে এই জন্তুর মাংস খুব আদরের সহিত আহার করে, আর ইহাদিগকে শিকার করিবার জন্য বিস্তর ক্লেশ ও বিপদ সহ্য করে। এ সকল লোকের বাস আমাদের দেশে নহে; কিন্তু আমি একটা পুস্তকে এ কথা লেখা দেখিয়াছি যে ভারতবর্ষের বাজারে নাকি কট্‌ল্ ফিশের মাংস বিক্রয় হয়। এ কথা কতদূর সত্য, তাহা আমি বলিতে পারি না; তবে এ দেশের কেহ কেহ যে উহা খায়, তাহার প্রমাণ তো ঐ জেলের ছেলেটার কাছেই পাওয়া গেল।

 এই সকল জেলে মাদরাজি; ইহাদিগকে নোরিয়া বলে। চেহারায় কথাবার্তায়, চাল-চলনে, সকল বিষয়েই ইহারা উড়িয়াদের চাইতে অনেক বিভিন্ন। সেখানকার দেশীয় জেলেও আছে, কিন্তু তাহারা সমুদ্রের মাছ ধরে না, তেমন সাহস আর উদ্যোগ তাহাদের নাই।

 ভারতবর্ষের গরিব লোকেরা কি পর্যন্ত পরিশ্রম করিয়া আর ক্লেশ পাইয়া দুবেলা দুই মুঠা