পাতা:ঊর্ম্মিমুখর.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঠোনের সেই জায়গাটা যেখানে বসে বালে একদিন মধুছন্দার অভিনয় দেখেছিলুম ভূষণ দাসের যাত্রার দলের, সব সেই রকমই আছে তবে যেন বড় পুরোনো হয়ে গিয়েচে । বারাকপুরে শৈশবে যাপিত কত রাঙা সন্ধ্যা, পাখীর ডাক ও মায়ের মুখ মনে পড়ল-বাড়ীর পিছনে বাশবনের কত দিনের কত ছায়া গহন, রাঙা রোদ গাছের মাথায় মাখানো সন্ধ্যা। যে সন্ধ্যা, যে শৈশব, যে পারাকপুর আর কখনো ফিরে আসবে না আমার জীবনে। ওখান থেকে বার হয়ে গঙ্গার ধারে বাধানো ঘাটের পৈঠায় অনেকক্ষপ বসে রইলুম। কালোর বৌভাতে শনিবার বাড়ী গিয়েছিলুম। দুপুরে খয়রামারির মাঠে যেমন বেড়াতে যাই গিয়েচি। একটী ঝোপের ধীরে বৈঁচি গাছে কচি বৈঁচি পাতা গজিয়েছে, মাথার ওপর নীল আকাশ, কি ঘন নীল, বাতালে যেন সঞ্জীবনী মন্ত্র মাঠের সর্বত্র ছড়ানো সিমুল গাছ স্কুলে রাঙা হয়ে রয়েচে। টেনে আসতে কাল শনিবারে রাঙা লিমুল ফুলের শোভা মুগ্ধ হয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি, মনে মনে ভাবি প্রতি বৎসর দেখচি আজ চল্লিশ বছর কিন্তু এরা তো পুরোনো হোল না, কেন পুরোনো হোল না—কেন প্রতি বৎসর শিরায় শিরায় আনন্দের স্রোত বইয়ে দেয়, তা কে বলবে ? গত শুক্রবারে আবার বসিরহাট গিয়েছিলুম। মাঠে মাঠে সিমুল গাছগুলি রাঙা হয়ে উঠেচে ফুলে ফুলে, বৈঁচুটিফুল ফুটেচে বাশবনের শুকনো ঝরা লতার মধ্যে, বাতাবী লেবু ফুলের গন্ধও মাঝে মাঝে পাচ্চি। বসিরহাটে নামজুম পিপ'ল:পল, প্রসাদের সঙ্গে বাধানে জেটির ঘাটে গিয়ে বসে রাঙা রোদ মাখানে ইছামতীর ওপারের দৃশুটা দেখলুম। এই স্থানটাতে দাড়িয়ে একদিন গৌরী বলেছিল,—গাড়ীতে কেমন কলের গান হচ্চিল, শুনছিলাম মজা করে। যে কথাটী, বলুন প্রবাদকে। রাত্রে অনেকক্ষণ পর্যন্ত দিদির সঙ্গে গল্প করলুম। পরদিন সকালে অর্থাৎ শনিবার কবি ভূজঙ্গভূষণ রায় চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে গেলুম। বয়স ৬৪৬ বছর হয়েছে, কিন্তু মাথায় একটা-চুলও পাকেনি, আমায় হ'প্লান বই দিলেন, চা খাওয়ালেন।