স্বপ্ন ভঙ্গ। এই জীবনধারা কোন পরিণতি গ্রহণ করিয়াছে, তাঁহার সাহিত্যক্ষেত্রে, রবীন্দ্রনাথের নিজের আত্মপরিচয় হইতেই তাহা শোনানো যাইতেছে। তিনি বলিয়াছেন—
“এই সত্তর বৎসর নানাপথ আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, আজ আমার আর সংশয় নেই, আমি চঞ্চলের লীলাসহচর।...... আমি তত্ত্বজ্ঞানী শাস্ত্রজ্ঞানী গুরু বা নেতা নই,......শুভ্র নিরঞ্জনের যাঁরা দূত তাঁরা পৃথিবীর পাপক্ষালন করেন, মানবকে নির্মল নিরাময় কল্যাণব্রতে প্রবর্তিত করেন, তাঁরা আমার পূজ্য; তাঁদের আসনের কাছে আমার আসন পড়েনি। কিন্তু সেই এক শুভ্রজ্যোতি যখন বহু বিচিত্র হন, তখন তিনি নানা বর্ণের আলোকরশ্মিতে আপনাকে বিচ্ছুরিত করেন, বিশ্বকে রঞ্জিত করেন, আমি সেই বিচিত্রের দূত।...... তাঁর খেলাঘরের যদি কিছু খেলনা জুগিয়ে দিয়ে থাকি, মাটির ভাঁড়ে যদি কিছু আনন্দরস জুগিয়ে থাকি, সেই যথেষ্ট। এই ধূলো-মাটি-ঘাসের মধ্যে আমি হৃদয় ঢেলে দিয়ে গেলাম বনস্পতি ঔষধির মধ্যে। যারা মাটির কোলের কাছে আছে, যারা মাটিতে হাঁটতে আরম্ভ করে শেষকালে মাটিতেই বিশ্রাম করে, তাদের সকলের বন্ধু আমি, আমি কবি।”
এই কবিই মাটিকে তাঁহার কবিজীবনের শেষ প্রণাম জানাইয়া গিয়াছেন—
“সত্যের আনন্দরূপ এ ধূলিতে নিয়েছে মূরতি
এই জেনে এ ধূলায় রাখিনু প্রণতি!”