পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

ভার লাঘব’ হইয়া যায়। ব্রহ্মই যে এই নিত্যসাক্ষী, তাহা রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধির বিবরণেই পাওয়া যায়; তাই দেখা যায় যে, এই নিত্যসাক্ষীকে তিনি বলিয়াছেন— ‘পরমদ্রষ্টা’ এবং ‘সর্বানুভূঃ’।

 গীতায় শ্রীভগবান বলিয়াছেন,—

 “শরীরকে ক্ষেত্র বলা হয় এবং প্রতি দেহে আমাকেই ক্ষেত্রজ্ঞ (সাক্ষী) বলিয়া জানিবে।”

  এখানে বলা হইয়াছে যে, স্থাবর-জঙ্গম সর্বক্ষেত্রে ভগবানই একমাত্র ক্ষেত্রী, সাক্ষী বা দ্রষ্টা। গীতা আরও বলিয়াছেন—

উপদ্রষ্টানুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বরঃ।
পরমত্মেতি চাপ্যুক্তো দেহেঽস্মিন পুরুষঃ পরঃ॥

  —এই দেহে পরমপুরুষ পরমাত্মা মহেশ্বর বিরাজিত আছেন; তিনি সাক্ষী, অনুমন্তা, ভর্তা ও ভোক্তা॥

 পূর্বের চেয়ে আরও পরিষ্কার ও স্পষ্ট করিয়া এখানে বলা হইয়াছে যে, পরমাত্মা বা ব্রহ্ম এই দেহেই আছেন এবং তিনিই একমাত্র দ্রষ্টা।

 প্রাচীনতম উপনিষদ বৃহদারণ্যকে এই তত্ত্বটি বিশদভাবে বিবৃত হইয়াছে: সেখানে দেখা যায় যে, জনকের রাজসভায় ব্রহ্ম-বিচারে গার্গীর প্রশ্নের উত্তরে মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলিয়াছেন,—“হে গার্গী! সেই অক্ষর (ব্রহ্ম) অ-দৃষ্ট কিন্তু দ্রষ্টা ...... তিনি ভিন্ন অন্য দ্রষ্টা নাই, অন্য বিজ্ঞাতা নাই॥”

  উপনিষদ এই তত্ত্বই স্পষ্ট ঘোষণা করিয়াছেন যে, ব্রহ্মই একমাত্র দ্রষ্টা বা সাক্ষী। ইঁহাকেই কেনোপনিষদ বলিয়াছেন—“দৃষ্টির দ্রষ্টা” এবং শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ বলিয়াছেন—“প্রধানক্ষেত্রজ্ঞপতি”। আর তাঁহাকেই রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন ‘পরমদ্রষ্টা’ এবং ‘নিত্যসাক্ষী’। মানুষ বা জীব সর্বজ্ঞ নহে, একমাত্র ঈশ্বরই সর্বজ্ঞ এবং সর্বসাক্ষী, এ তত্ত্ব সর্বশাস্ত্রেই স্বীকৃত।

 কিন্তু ইহাকেই যে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়াছিলেন এবং তাঁহারই পাশে গিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন, তাহার প্রমাণ কি? সেই প্রমাণটি উপস্থাপিত করিবার পূর্বে উপনিষদের একটু সাহায্য লওয়া যাইতেছে।

 বৃহদারণ্যক উপনিষদে জানা যায় যে, ঋষি উদ্দালকের প্রশ্নের উত্তরে মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলিয়াছেন—“এষ তে আত্মা অন্তর্যামী অমৃত”, ব্রহ্মই অন্তর্যামী ও অমৃত এবং তিনিই তোমার আত্মা॥ অতঃপর মহর্ষি অতি বিস্তৃতভাবে এই তত্ত্বটির উপদেশ দান করিয়াছেন—