পাওয়া যায়—
দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া
সমানাং বৃক্ষ পরিষস্বজাতে।
তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদু অত্তি
অনশ্নন অন্যো অভিচাকশীতি॥
সমানে বৃক্ষে পুরুষো নিমগ্নঃ
অনীশয়া শোচতি মুহ্যমানঃ।
জুষ্টং সদা পশ্যতি অন্যসীশম্
অস্য মহিমানমিতি বীতশোকঃ॥
—দুইটি সুন্দর পক্ষী একই বৃক্ষে অধিষ্ঠিত আছে। তাহারা পরস্পর পরস্পরের সখা। তাহাদের মধ্যে একজন সুস্বাদু ফল ভক্ষণ করে; অপর ভক্ষণ করে না, শুধুই দেখে। একই বৃক্ষে একজন (জীব) নিমগ্ন হইয়া ঈশ্বরভাবের অভাবে মোহাচ্ছন্ন হইয়া শোক করে; কিন্তু সে যখন অন্যকে (ব্রহ্মকে) দেখিতে পায়, তখন তাঁহার মহিমা অনুভব করিয়া শোকের অতীত হয়॥
একই বৃক্ষে দুই পক্ষী বলিতে উপনিষদ একই দেহে জীব এবং ব্রহ্মের সহঅবস্থিতি বুঝাইয়াছেন। জীব সংসারের সুখ-দুঃখের ভোক্তা, সংসারের শোক দুঃখে মুহ্যমান, সে যখন তাহার সখা ব্রহ্মকে দেখে, তখন শোকের অতীত হয়, ইহাই হইল উপনিষদের মন্ত্র দুটির নির্গলিতার্থ। রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধির মধ্যে যাহাকে আমরা প্রধান কথা বলিয়াছি, তাহা এই মন্ত্রদুইটিরই আক্ষরিক অনুবাদ বলা যাইতে পারে।
উপনিষদ বলিয়াছেন, “দুই সখা”, আর রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—“আমার পরম অন্তরঙ্গ সঙ্গী।”
উপনিষদ বলিয়াছেন ‘এক পাখী সুস্বাদু ফল ভক্ষণ করে’, আর রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—“দেখতে পেলুম দ্রষ্টারূপে এক নিত্যসাক্ষীর পাশে বিচলিত করেচে”।
উপনিষদ বলিয়াছেন, ‘একজন ফল ভক্ষণ করে না, শুধুই দেখে’, আর রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—“নিত্যসাক্ষীর পাশে দাঁড়িয়ে”।
উপনিষদ বলিয়াছেন, ‘যখন জীব অন্যকে (ব্রহ্মকে) দেখিতে পায়’, আর রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—“দেখতে পেলুম দ্রষ্টারূপে এক নিত্যসাক্ষীর পাশে দাঁড়িয়ে”।