অর্থ বহন এবং একই সত্য নির্দেশ করিয়া থাকে।
‘আলোকের অতীত আলোক,’ ইহা দ্বারা রবীন্দ্রনাথ কোন্ লোক বা স্থান, অথবা কোন্ আলোকের নির্দেশ করিতে চাহিয়াছেন?
উপনিষদ বলেন, ব্রহ্ম সর্বস্থানে এবং সর্বকালে থাকিয়াও স্থান ও কালের অতীত। সে কোন্ স্থান?
বৃহদারণ্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য সম্রাট জনককে ব্রহ্মোপদেশ করিতে গিয়া বলিয়াছেন—
যস্মাদর্বাক্, সংবৎকরোঽহোভিঃ পরিবর্ততে।
তদ্দোবা জ্যোতিষাং জ্যোতিরায়ুর্হোপাসতেহমৃতম॥
—যাঁহাকে স্পর্শ না করিয়া সম্বৎসর দিবসের সহিত আবর্তিত হয়, দেবগণ তাঁহাকে জ্যোতির জ্যোতি অমৃত আয়ু বলিয়া উপাসনা করেন॥
যাঁহাকে কাল স্পর্শ করে না, তিনি শুধু কালাতীতই নহেন, তিনি কালের ন্যায় স্থানেরও অনবচ্ছিন্ন এবং তিনিই ব্রহ্ম এবং তাঁহাকেই ঋষি যাজ্ঞলক্ষ্য ‘জ্যোতিষাং জ্যোতি’ বলিয়াছেন।
আর রবীন্দ্রনাথ সেই ‘জ্যোতিষাং জ্যোতি’-কেই বলিয়াছেন—“আলোকের অতীত আলোক।”
মুণ্ডকোপনিষদেও অনুরূপ একটি শ্লোক রহিয়াছে—
হিরন্ময়ে পরেকোশে বিরজং ব্রহ্ম নিষ্কলম্।
তচ্ছুভ্রং জ্যোতিষাং জ্যোতিস্তদ্ যদাত্মবিদোবিদুঃ॥
—জ্যোতির্ময় শ্রেষ্ঠ কোশমধ্যে (হৃদয়-কোশে) বিরজ (দোষহীন) নিষ্কল (নিরবয়ব) যে ব্রহ্ম অবস্থিত, তিনি শুভ্র (শুদ্ধ) এবং তেজোময় পদার্থসমূহেরও অবভাসক, যাঁহারা আত্মজ্ঞানী তাঁহারাইমাত্র তাঁহাকে জানেন॥
এখানেও ব্রহ্মকে জ্যোতিষাং জ্যোতি, আলোর আলোক বলা হইয়াছে। কিন্তু এ আলো কোথায়?
সে স্থানের বর্ণনায় উপনিষদ বলিয়াছেন—
ন তত্র সূর্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং
নে মা বিদ্যূতো ভান্তি কুতোহয়মগ্নিঃ।
তমেবভান্তমনুভাতি সর্বং
তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি॥