( ১৩ )
সুপ্রসিদ্ধ দার্শনিক ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত একবার রবীন্দ্রনাথকে কবিতায় একখানি চিঠি লেখেন, রবীন্দ্রনাথও কবিতায় সে-পত্রের উত্তর দেন। দার্শনিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, কবি-ঋষি, অর্থাৎ দ্রষ্টা সে-জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়াছেন। সে-উত্তরে আপন উপলব্ধির কথাই রবীন্দ্রনাথ কবিতায় লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।
রবীন্দ্রনাথের সমগ্র পত্রখানি উদ্ধৃত করিবার অবকাশ নাই, পত্রখানি পাঠ করিলে পাঠকমাত্রেই দেখিতে পাইবেন যে, তাহা ব্রহ্মোপলব্ধির রসে বা আনন্দে আদ্যন্ত ওতপ্রোত।
পত্রের আরম্ভেই রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন—
চিরপ্রশ্নের বেদী সন্মুখে
চিরনির্বাক রহে বিরাট নিরুত্তর।
অনন্ত জিজ্ঞাসা আর অনন্ত মৌন চির-মুখোমুখী দাঁড়াইয়া—এই দর্শন কোন্ দৃষ্টিতে বা কাহার দৃষ্টিতে সম্ভব? এখানে একাধারে ঋষির ব্রহ্ম-জিজ্ঞাসা এবং ব্রহ্ম-মীমাংসা দুইয়েরই সাক্ষাৎ আমরা পাইয়া থাকি।
ইহার পরেই তাঁহার পত্রে রবীন্দ্রনাথ খবর জানাইয়াছেন—
চকিত আলোকে কখনও সহসা দেখা দেয় সুন্দর,
দেয় না তবুও ধরা ॥
‘সুন্দর’ বলিতে রবীন্দ্রনাথ এখানে তাঁহাকেই বুঝাইয়াছেন, উপনিষদ যাঁহাকে বলিয়াছেন——‘আনন্দ’ এবং ‘রসো বৈ সঃ’; কারণ ইহার পূর্বে ‘পরম’ এবং পরে ‘অমৃত’এই শব্দ দুইটির প্রয়োগ তিনি করিয়াছেন।