এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দুবাহু বাড়ায়ে॥
আলোচ্য পত্রে অতঃপর রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন যে, জীবনে দুঃখ পাইয়াছেন, দৈন্যও ঘিরিয়াছে, মানুষের কুশ্রীতা কদর্যতাও বহু দেখিয়াছেন, সবই সত্য। কিন্তু ইহার অপেক্ষাও বড় বা পরম সত্য এই—
তবু তো বধির করেনি শ্রবণ কভু,
বেসুর ছাপায়ে কে দিয়েছে সুর আনি,
পরুষ কলুষ ঝঞ্ঝায় শুনি তবু
চিরদিবসের শান্তশিবের বাণী॥
উপনিষদ ব্রহ্মকে বলিয়াছেন—‘শান্তং শিবং’, আর রবীন্দ্রনাথ তাঁহাকেই বলিয়াছেন ‘চিরদিবসের শান্ত শিব’ এবং তাঁহারই যে মৌন-বাণী সৃষ্টির যাবতীয় কোলাহলের আড়ালে ‘অনাহত’ ধ্বনিত হইতেছে, সেই বাণীই তিনি শ্রবণ করিয়াছেন, এই কথাই রবীন্দ্রনাথ তাঁহার লিখিত পত্রখানিতে জানাইয়াছেন। এই ‘অনাহত নাদ’ পৃথিবীর এই আকাশে শোনা যায় না, সে-নাদধ্বনি যে আকাশে শোনা যায় তাহারই নাম আকাশ-ব্রহ্ম।
পত্রটির আলোচনা পত্রের শেষ কয়টি ছত্র উদ্ধৃত করিয়াই শেষ করা যাইতেছে। শেষ কয়টি কথায় রবীন্দ্রনাথ নিজের উপলব্ধির চরম কথাটিই জানাইয়াছেন, পাঠ করিলেই বুঝা যাইবে, বিশ্লেষণের দরকার হইবে না। কথা কয়টি এই—
জীবনের যাহা জেনেছি অনেক তাই,
সীমা থাকে থাক, তবু তার সীমা নাই।
নিবিড় তাহার সত্য আমার প্রাণে
নিখিল ভুবন ব্যাপিয়া নিজেরে জানে॥
এখন অন্য একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাইতেছে। এই ঘটনা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ যে ঘোষণা করিয়াছেন, তাহা ব্রহ্মোপলব্ধিরই ঘোষণা—
একদা পথ চলিতে গিয়া রবীন্দ্রনাথ দেখিতে পান যে, মৃত পশুর একটি কঙ্কাল পথের একপাশে পড়িয়া আছে;—পশুর এই অস্থিরাশি যেন কালের