পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৬৯

বলিয়াছেন। বস্তুতঃ এক বেদান্ত দর্শন ব্যতীত সকল দর্শনেই জগৎকে দুঃখ বলিয়া গ্রহণ করা হইয়াছে।

 একমাত্র বেদান্ত-দর্শন অর্থাৎ ব্রহ্মসূত্রই জগতকে বলিয়াছেন—ব্রহ্মেরলীলা। লীলা বলিতে দুঃখ বুঝায় না, বুঝায় ব্রহ্মের আনন্দলীলা। উপনিষদ স্পষ্টই উপদেশ করিয়াছেন—এই জগৎ ব্রহ্মের আনন্দস্বরূপ। কিন্তু জগতের দুঃখ-রূপটিই প্রকাশিত এবং তাহাই আমাদের দৃষ্টিতে ও জীবনে নিত্য প্রমাণিত হইয়া থাকে। জগতের যদি কোন আনন্দ-রূপ থাকিয়াও থাকে, তাহা আমাদের দৃষ্টিতে গুপ্ত বা অ-দৃষ্ট।

 রবীন্দ্রনাথ জগতের দুঃখ-রূপটিকে একান্ত অস্বীকার করেন নাই, সেই রূপটিকেও গ্রহণ করিয়াছেন। তারপর সেই দুঃখের আড়ালে আনন্দকেও তিনি আবিষ্কার করিয়াছেন। তাই তিনি বলিতে পারিয়াছেন— “দুঃখের বক্ষের মাঝে আনন্দের পেয়েছি সন্ধান।” কেবল ব্রহ্ম-দৃষ্টিতে অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞের দৃষ্টিতেই জগতের এই আনন্দ-স্বরূপটি উদ্ঘাটিত হইয়া থাকে। অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মদৃষ্টিপ্রাপ্ত বা ব্রহ্মদর্শন-প্রাপ্ত পুরুষ।

 “অনন্ত মৌনের বাণী,” এবং “শূন্যময় অন্ধকারে জ্যোতির পথ”—উভয় ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতে ব্রহ্মকেই নির্দেশ করা হইয়াছে। প্রথম ক্ষেত্রে পাই ‘অনাহত নাদ’-কে অর্থাৎ শব্দব্রহ্মকে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা পাই ‘জ্যোতির্ব্রহ্মকে।’ এই উভয় আলোচনা পূর্বেই করা হইয়াছে। কাজেই পুনরাবৃত্তি না করিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইতেছে যে, এই উপলব্ধিতেও রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টভাবে ব্রহ্মদর্শনের কথাই ঘোষণা করিয়াছেন।