পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৭৭


 এই চিঠিখানির আরম্ভেই রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন,

 “আবার আমার মন পলাতক। সমস্ত দিন কিছু করিনে কেবল সামনে চেয়ে বসে আছি—দেখি পূর্ণতা সেই শূন্যে॥”

 শূন্যকে আমরা শূন্যই দেখি। কিন্তু এ কোন ‘পূর্ণতা’, যাহা শূন্যকেই পূর্ণ করিয়া পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে?

 তপোবনের ঋষির একটি প্রার্থনা-মন্ত্রে আছে “তোমার এই শূন্যতাকে পূর্ণ করিব নিজে শূন্য হইয়া।” অহং-এর নিঃশেষে বিলোপই ‘নিজে শূন্য হওয়া’ এবং অহং সরিয়া গেলে শূন্যকে যিনি পূর্ণ করিয়া আবির্ভূত হন, তিনিই আত্মা। এঁরই এক নাম পূর্ণ এবং তাঁহাকে দেখিয়াই রবীন্দ্রনাথ বলিতে পারিয়াছেন—“দেখি পূর্ণতা সেই শূন্যে।”


 নিজের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ লিখিতে অনুরুদ্ধ হইয়া রবীন্দ্রনাথ ১৩১১ সালে যাহা লিখিয়াছিলেন, তাহার একস্থানে এই কয়টি কথা আছে।

 “কতদিন নৌকায় বসিয়া সূর্যকরোদ্দীপ্ত জলে স্থলে আকাশে আমার অন্তরাত্মাকে নিঃশেষে বিকীর্ণ করিয়া দিয়াছি, তখন মাটিকে আর মাটি বলিয়া দূরে রাখি নাই, তখন জলের ধারা আমার অন্তরের মধ্যে আনন্দগানে বহিয়া গেছে; তখনি একথা বলিতে পারিয়াছি: যেথা যাব সেথা অসীম বাঁধনে অন্তবিহীন আপনা॥”

 ভাষ্য বা ব্যাখ্যা অনাবশ্যক। এই ‘জীবন বৃত্তান্তের’-ই অন্যত্র তিনি লিখিয়াছেন—

 “আমি, কি আত্মার মধ্যে, কি বিশ্বের মধ্যে বিস্ময়ের অন্ত দেখি না। আমি জড় নাম দিয়া, অসীম নাম দিয়া কোনো জিনিষকে একপাশে ঠেলিয়া রাখিতে পারি নাই। এই সীমার মধ্যেই এই প্রত্যক্ষের মধ্যেই অনন্তের যে প্রকাশ, তাহাই আমার কাছে অসীম বিস্ময়াবহ॥”

 ‘অনন্তের প্রকাশকেই’ বৈদিক ঋষি বলিয়াছেন ‘দেবস্যকাব্যং’, আর উপনিষদের ঋষি বলিয়াছেন ‘আনন্দলীলা’ এবং এই দুইয়েরই ব্যাখ্যা পূর্বে করা হইয়াছে।

 সপ্ততিবর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে কলিকাতা টাউন হলে যে রবীন্দ্র জয়ন্তী (১১ই পৌষ ১৩৩৮) অনুষ্ঠিত হয়, সেই সময়ে দেশবাসীর অভিনন্দনের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘প্রতিভাষণে’ নিজের সম্বন্ধে প্রসঙ্গতঃ এই কয়টি কথা জানাইয়াছিলেন—

 “আমি জীর্ণ জগতে জন্মগ্রহণ করিনি। আমি চোখ মেলে যা দেখলুম