পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৭৯

—কে তুমি? কি তোমার সত্য পরিচয়? তাই নিজেকে কিছুটা অনাবৃত করিয়া নিজের সত্য রূপটির কিছু আভাস তিনি দেখাইয়াছিলেন। সে রূপ সত্যদ্রষ্টা ঋষির রূপ, সে রূপ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষেরই রূপ।

 আশি বৎসরে আয়ুর শেষ সীমায় আসিয়া রবীন্দ্রনাথ যে আত্মপরিচয়টুকু লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, তাহা হইতে মাত্র দুইটি উক্তি উদ্ধৃত করিয়া পরে প্রসঙ্গান্তরে যাওয়া যাইতেছে।

 প্রথম উক্তিটি এই—“সংসারের নিয়মকে জেনেছি, তাকে মানতেও হয়েছে, মূঢ়ের মতো তাকে উচ্ছৃঙ্খল কল্পনায় বিকৃত করে দেখিনি, কিন্তু এই সমস্ত ব্যবহারের মাঝখান দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে আমার মন যুক্ত হয়ে চলে গেছে সেইখানে যেখানে সৃষ্টি গেছে সৃষ্টির অতীতে। এই যোগে সার্থক হয়েছে আমার জীবন॥”

 উপনিষদ বলিয়াছেন, পাদোঽস্য বিশ্বাভূতানি ত্রিপাদাস্যামৃতং দিবি—সৃষ্টি তাঁহার একপাদ আর ত্রিপাদ তাঁহার অমৃতলোকে। ‘সৃষ্টির অতীত’ বলিতে এই ‘অমৃতংদিবি’ অমৃত-স্বরূপ জ্যোতির্লোককেই বুঝানো হইয়াছে। সেখানে যাঁহার মন গিয়াছে, সেই ঋষিই কেবল বলিতে পারেন—‘সার্থক হয়েছে আমার জীবন।’

 এখন রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় উক্তিটি উদ্ধৃত হইতেছে, যাহা আশি বছরে আয়ুর প্রান্তে আসিয়া তিনি আত্মপরিচয়ে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। উক্তিটি এই—

 “নিজের ভিতরকার এই প্রাণময় রহস্যকে, তং দুর্দর্শং গূঢ়মনুপ্রবিষ্টং, সেই অদৃশ্যকে, সেই নিগূঢ়কে কী নাম দেব জানিনে।... কিন্তু আমি তাঁকে বারবার অনুভব করেছি। বিশেষভাবে আজ যখন আয়ুর প্রান্ত সীমায় এসে পৌঁছেছি তখন তাঁর উপলব্ধি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে॥”

 কার উপলব্ধি ‘আরো স্পষ্ট’ হইয়া উঠিয়াছে? উপনিষদের ভাষা আক্ষরিক গ্রহণ করিয়া তাঁহারই পরিচয় রবীন্দ্রনাথ দিয়াছেন—‘দুর্দশম্ গূঢ়ম্, অনুপ্রবিষ্টং গহ্বরেষ্ঠং পুরাণম্।’ ইনিই ব্রহ্ম।

 দেখা যাইতেছে যে, আশি বছরে আসিয়া রবীন্দ্রনাথ ঘোষণা করিয়াছেন ‘তাঁর (ব্রহ্মের) উপলব্ধি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’