পাতা:একঘরে - দ্বিজেন্দ্রলাল রায়.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একঘরে।

পদে পদে মিছা কথা, বিবেকের বেশ্যাবৃত্তি, সে সমাজ হইতে এতদিন বাহির হইয়া আসি নাই কেন, ইহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিতে বলেন ত রাজি আছি।

 —মহাশয়, আমরা কি দুঃখে, কি অসহ্য জালায়, কি লজ্জাময় যন্ত্রণায়, প্রায়শ্চিত্ত করিব বলিয়া দিউন। সত্য, আপনাদের সমাজ হইতে আমরা ‘একঘরে’। কিন্তু তাই বলিয়া কোন হিন্দুসন্তান বিলেত-ফেরতাদিগের উপর ঘৃণার বা তাচ্ছল্যের দৃষ্টি-নিক্ষেপ করে? আমাদের সমাজ ছোট; হয়ত সহস্রাধিকও হইবে না। কিন্তু আপনাদের সপ্ত কোটীর সমাজে কয়টি মাইকেল বা লালমোহন ঘোষ দেখাইতে পারে। এ সমাজ ছোট কিন্তু মূর্খ নহে। যে সমাজে কেশবচন্দ্র সেন, রমেশচন্দ্র দত্তসুরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; যে সমাজে তরুদত্তরমাবাই; সে সমাজ মূর্খ, হতাদর, ঘৃণ্য নহে। এ সমাজ একঘরে হইয়াও মহৎ। এ সমাজ ছোট, কিন্তু এ সমাজে প্রতিজন অন্ততঃ বলিতে পারে যে “আমি বিলেত-ফেরতা।” এ সমাজ ছোট—কিন্তু ইহা রাজার সমাজ।

 আর একঘরে হওয়াতে কিছু লজ্জার বিষয় নাই। একঘরের অর্থ ‘কদাচারী’ নহে। একঘরে করা পৃথিবীর সর্ব্বত্র আছে। যেখানে যে বিভিন্নমত দলের সংখ্যা অতি কম, সেখানে সে দল একঘরে। আমাদের দেশে যিনি প্রথমে মেডিক্যাল কলেজে পুত্রকে পাঠাইয়াছিলেন, তিনি একঘরে হইয়াছিলেন। যিনি প্রথমে পৌত্তলিকতার বিপক্ষে দাঁড়াইয়াছিলেন, তিনি একঘরে হইয়াছিলেন। যিনি হিন্দুবিধবার বিবাহ দিয়াছিলেন, তিনি একঘরে হইয়াছিলেন। একদিন ঈশাও একঘরে হইয়াছিলেন, একদিন গ্যালিলিও একঘরে হইয়াছিলেন। দেখিতে পাইতেছি এ পৃথিবীতে যাঁহারা নবপ্রথার নবনীতির নবধর্ম্মের নেতা, তাহারা একঘরে। এ জগতের প্রশ্নময় পথে যাঁহারা অগ্রগামী, যাঁহারা জাতীয় জড়তার জীবন, যাঁহারা উন্নতির ধর্ম্মের জ্ঞানের প্রথম সহায়, তাঁহারা