এদিকে শিশিরকুমার উপলব্ধি করতে পারলেন একটি নিশ্চিত সত্য। পরের চাকরি করে দিন গুজরাণ করতে তিনি আসেন নি নাট্যজগতে। নাট্যকলার প্রত্যেকটি বিভাগ নিজের নখদর্পণে রেখে কর্তৃত্ব করবার অধিকার না থাকলে নাট্যজগতে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না অখণ্ড, অভিনব সৌন্দর্য। ম্যাডানদের কাছে সে স্বাধীনতা পাবার সম্ভাবনা নেই। তিনি আবার অদৃশ্য হলেন যবনিকার অন্তরালে।
কিছুদিন কাটল চলচ্চিত্র নিয়ে। তাঁর পরিচালনায় দেখানো হ’ল শরৎচন্দ্রের প্রথম চিত্রকাহিনী “আঁধারে আলো”।
ইতিমধ্যে নবযাগের অগ্রনেতারূপে যে নূতন মার্গের সন্ধান তিনি দিয়ে গিয়েছেন, তার উপরে দেখা যেতে লাগল নব নব মার্গিককে। তাঁকে হারিয়ে ম্যাডানরা অবলম্বন করলেন নির্মলেন্দু লাহিড়ীকে। তারপর চোখ ফুটল ষ্টার থিয়েটারের। আর্ট সম্প্রদায়ের পরিচালনায় সেখানে দেখা দিয়ে তিনকড়ি চক্রবর্তী, শ্রীনরেশচন্দ্র মিত্র, শ্রীঅহীন্দ্র চৌধুরী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইন্দু মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি তরুণ শিল্পীর দল “কর্ণার্জুনে”র মত নিতান্ত সাধারণ নাটককেও নিজেদের অভিনয়গুণে অসাধারণ রূপে সাফল্যমণ্ডিত ক’রে তুললেন। বাংলা রঙ্গালয় যে চায় নব যুগের শিল্পী, শিশিরকুমার সর্বপ্রথমে যদি এ সত্য প্রমাণিত না করতেন, তাহ’লে আজও হয়তো আমাদের সহ্য করতে হ’ত বালখিল্যদের অত্যাচার। নির্মলেন্দু আমার কাছে স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছিলেন, “শিশিরবাবু আগে না এলে পাবলিক থিয়েটারে যোগ দেবার সাহস আমাদের হত না।” সতরাং শিশির-কুমারকে মাত্র জনৈক ব্যক্তি না ব’লে একটি প্রতিষ্ঠান ব’লে গণ্য করা যায় অনায়াসেই। একথা হয়তো কারুর কারুর পছন্দসই হবে না, কিন্তু এ কথা অত্যুক্তি নয়। যে-কোন বাংলা রঙ্গালয়ের দিকে তাকলেই দেখা যাবে তাঁর শিষ্য বা প্রশিষ্যের দলকে। জেনে বা না জেনে অনেকেই করেন তাঁরই অনুসরণ।
সেটা ঠিক কোন বৎসর স্মরণ হচ্ছে না, তবে ১৯২৩ কি ২৪ খৃষ্টাব্দ। ইডেন গার্ডেনে বসে মস্ত এক প্রদর্শনী। কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে শিশিরকুমার আবার সেখানে পাদপ্রদীপের আলোকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পান। তিনি ললিতমোহন লাহিড়ী, বিশ্বনাথ
৮৭