নেপথ্যে শিশিরকুমার
শিশিরকুমার যে সাধারণ রঙ্গালয়ে যোগদান করবেন সে কথা তখন পাকা হয়ে গিয়েছে। একদিন বৈকালে কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটে স্বর্গীয় বন্ধুবর গজেন্দ্রচন্দ্র ঘোষের বৈঠকখানায় বসে আছি। গজেনবাবু ছিলেন অত্যন্ত সদালাপী ও সামাজিক মানুষ। তখনকার সাহিত্য-সমাজের সকলেই তাঁকে ভালোবাসতেন এবং তাঁর বৈঠকে প্রত্যহ এসে আসন গ্রহণ করতেন প্রবীণ ও নবীন বহু, সাহিত্যিক ও অন্যান্য শ্রেণীর শিল্পী। তিনি ছিলেন সকলেরই “গজেনদা”।
সেইখানেই এসে উপস্থিত হলেন গজেনদার মধ্যম ভ্রাতা শ্রীরামগোপাল ঘোষের সঙ্গে শিশিরকুমার, ছাত্রজীবনে ওঁরা দু'জনে ছিলেন সহপাঠী। প্রথমেই চিনি চিনি ক'রেও ভালো ক'রে শিশির-কুমারকে চিনতে পারলাম না, কারণ তার আগে তাঁকে একবারমাত্র দেখেছিলাম “পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস” নাট্যানুষ্ঠানে অভিনেতার ছদ্মবেশে।
কিন্তু তাঁর চেহারা যে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল, সে কথা বলাই বাহুল্য, তাঁর মূর্তি আজও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার কারণ কেবল দৈহিক সৌন্দর্য নয়, শিশিরকুমারেরও চেয়ে সুপুরুষ আমি অনেক দেখেছি। কিন্তু তাঁর মুখে-চোখে যে ধী, প্রতিভা ও সংস্কৃতির স্পষ্ট ছাপ আছে, সাধারণতঃ তা দুর্লভ। দেখলেই মনে হয়, মানুষটি গুণী অনন্যসাধারণ।
আমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হলাম। কথা আরম্ভ করলেন তিনি সাধারণভাবেই। বললেন, “হেমেন্দ্রবাবু, 'হিন্দুস্থান' পত্রিকার ‘পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসে'র যে সমালোচনা বেরিয়েছে, শুনলাম সেটি আপনার লেখা। আমার ভালো লেগেছে।”
জবাবে কি বলেছিলাম মনে নেই। “আপনার ভালো লেগেছে শুনে সুখী হলাম”— হয়তো বলেছিলুম এই রকম কোনও কথাই।
তারপর শিশিরকুমার বেশ খানিকক্ষণ ধ'রে ব'সে ব'সে বাক্যালাপ
৯১