ক’রে গেলেন। প্রথম দিনেই উপলব্ধি করতে পারলুম, তিনি অনায়াসেই অভিনেতা না হয়ে সাহিত্যিক হ’তে পারতেন। কারণ তাঁর মুখ দিয়ে অনর্গল নির্গত হ’তে লাগল কাব্য ও আর্টের কথা। গিরিশচন্দ্র ও অমৃতলাল বসুর সংলাপ শুনেছি। গিরিশচন্দ্রের সংলাপ সম্বলিত একখানি পুস্তকও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের সংলাপ ছিল জ্ঞানগর্ভ। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই ছিলেন গ্রন্থকার। সুতরাং তাঁদের পক্ষে সাহিত্যিকদের মত আলাপ করা সম্ভবপরই ছিল। কিন্তু বাংলা দেশের অধিকাংশ বিখ্যাত নটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সংযোগ স্থাপন ক’রে দেখেছি, তাঁরা সাহিত্যিকদের মত আলাপ করবেন কি, তাঁদের অনেকেরই স্বদেশী-বিদেশী সাহিত্যরসের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কই নেই। এমন সব নামজাদা অভিনেতাও দেখেছি, যাঁরা পাশ্চাত্য সাহিত্যের কথা দূরে থাক্, ঘরের জিনিস রবীন্দ্ররচনারও সঙ্গে পরিচিত নন। “শেষের কবিতা” সামনে ধরলে তাঁরা চোখে সরষে ফুল দেখে মাথায় হাত দিয়ে ব’সে পড়বেন। একাধিক গণ্ডমূর্খও এখানে প্রথম শ্রেণীর শিল্পী ব’লেও অভিনন্দিত হয়েছেন। নাটকও সাহিত্যের অন্তর্গত। সাহিত্যরসে বঞ্চিত হয়েও নাট্যাভিনয়ে তাঁরা নাম কিনেছেন হয়তো কেবল গুরুকৃপাতেই। তাঁদের কাছে গিয়ে শুনেছি শুধু আজেবাজে গালগল্প।
এমন কি, কাব্য ও ললিতকলা নিয়ে শিশিরকুমারের মত মুখে মুখে বিচিত্র আলোচনা করতে পারেন, এরকম সাহিত্যিকও আমি খুবই কম দেখেছি। সাধারণ কথায় তিনি বড় কান পাতেন না, অশ্রান্তভাবে বলতে ও শুনতে চান কেবল আর্ট ও সাহিত্যের যে কোন প্রসঙ্গ এবং সঙ্গে সঙ্গে সর্বদাই আবৃত্তি ক’রে যান স্বদেশী ও বিদেশী কবিদের বচনের পর বচন। কেবল তাঁর অভিনয় দেখা নয়, তাঁর সঙ্গে আলাপ করাও একটি পরম উপভোগ্য আনন্দ। এই প্রাচীন বয়সেও এবং রঙ্গালয় সম্পর্কীয় নানা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়েও তাঁর কাব্যগত শিল্পীর প্রাণ একটুও শ্রান্ত বা অন্যমনা হয়ে পড়েনি,—গানের পাখী যেমন গান গাইবেই, শিশিরকুমারের রসনাও তেমনি শোনাবেই শোনাবে শিল্প ও সাহিত্যের বাণী। নির্জন বাড়িতে আমি নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করি। সেখানে যখন মাঝে মাঝে শিশির-
৯২