পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেপথ্যে শিশিরকুমার

কুমারের আবির্ভাব হয়, আমার মনে জাগে অপূর্ব আনন্দের প্রত্যাশা। নির্জনতা পরিণত হয় যেন জনসভায়—কানে শুনি কত গুণীর, কত কবির ভাষা। শিশিরকুমার একাই একশো।

 রবীন্দ্রনাথ কবিবর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে অতিশয় ভালোবাসতেন, তাঁর অকালমৃত্যু তাঁকে অভিভূত করেছিল। তাই প্রাণের দরদ ঢেলে রচনা করেছিলেন অসাধারণ ও সুদীর্ঘ একটি শোক-কবিতা। কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরীতে সত্যেন্দ্রনাথের জন্যে একটি জনবহুল শোকসভার অনুষ্ঠান হয় এবং রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং উপস্থিত থেকে ভাবগম্ভীর উদাত্তকণ্ঠে সেই কবিতাটি পাঠ করেন। সভাস্থলে শ্রোতা ছিলেন অসংখ্য সাহিত্যিক ও বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে শিশিরকুমারও। সকলের মনকেই একান্ত অভিভূত ক’রে তুলেছিল মৃত কবির উদ্দেশ্যে কবিগুরুর সেই অপূর্ব ভাষণ।

 সভাভঙ্গের পর আমাদের সঙ্গে শিশিরকুমারও বাইরে এসে দাঁড়ালেন। তারপর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ব’লে উঠলেন, “ভাই, আমার জন্যে রবীন্দ্রনাথ যদি এইরকম একটি কবিতা রচনা করেন, তাহ’লে এখনি আমি চলন্ত মোটরের তলায় চাপা প’ড়ে মরতে রাজি আছি।” বাংলা দেশের আর কোন অভিনেতার—এমন কি সাহিত্যিকেরও মুখ দিয়ে নির্গত হ’ত না এমন উক্তি। এর মধ্যে একসঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর রচনার অতুলনীয়তা সম্বন্ধে কাব্যগতপ্রাণ শিশিরকুমারের মনের ভাব। একসঙ্গে সমালোচন মহাপুরুষার্চন।

 শিশিরকুমার অভিনেতা, সুতরাং নাট্যজগৎ নিয়েই তাঁর একান্তভাবে নিযুক্ত হয়ে থাকবার কথা। যেমন ছিলেন গিরিশচন্দ্র। তিনি সামাজিক ও সাহিত্যিক বৈঠকে বা সভায় যেতে চাইতেন না। কিন্তু শিশিরকুমারের প্রকৃতিতে দেখি এর বৈপরীত্য। নাট্যসাধনাকেই জীবনের প্রধান সাধনা ক’রে তুলেছেন বটে, কিন্তু রঙ্গালয়ের প্রতিবেশ তাঁকে সর্বক্ষণ খুশি ক’রে রাখতে পারে না—তাঁর চিত্ত কামনা করে সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সঙ্গ।

 অধুনালুপ্ত “ভারতী”র বৈঠক এখানকার সাহিত্যসমাজে বিখ্যাত হয়ে আছে। সেখানে যাঁরা ওঠা-বসা করতেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন

৯৩