লোককে। নির্দিষ্ট দিনে সাত-আটজন সহকারী ও বাদ্যভাণ্ড নিয়ে চিত্তরঞ্জন এলেন এবং ঘণ্টা দুই ধ’রে সকলকে শুনিয়ে দিলেন রীতিমত কীর্তনগান। সে হচ্ছে উপভোগ্য সঙ্গীত।
“ভারতী”র সে আসর ছিল উচ্চশ্রেণীর বিদ্বজ্জনসভা, তাই তার দিকে ঝুঁকতেন নানা শ্রেণীর শিল্পী। সভ্যদের মধ্যে যে কয়জন আজও ইহঁলোকে বিদ্যমান আছেন, তার অভাব একান্তভাবে অনুভব করেন তাঁরা সকলেই। এই নষ্টনীড়ের কথা স্মরণ ক’রেই প্রায় দুই যুগ আগে অসিতকুমার (তিনি তখন লক্ষ্নৌয়ের সরকারি চিত্রবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ) আমাকে একখানি পত্রে লিখেছিলেন: “হেমেন, তোমার চিঠিখানি পেয়ে ভারি আনন্দ হ’ল। আমাদের দলের মধ্যে তোমার সহৃদয়তার গর্ব আমরা বরাবরই ক’রে থাকি। কলকাতায় যাই, কিন্তু মনে হয় যেন ডানা ভাঙা—বাসা থেকেও বাসা নেই। আমাদের সেই নীড়ের কথা কি কখনো ভোলা যায়?”
অসিতকুমার ছবি এঁকেছেন প্রধানতঃ প্রাচ্য চিত্রকলাপদ্ধতি অনুসারেই। তিনি যে অবনীন্দ্রনাথের শিষ্য, তাঁর ছবি দেখলেই এ কথা বোঝা যায়, যদিও তাঁর নিজস্ব ‘ষ্টাইল’টকুও ধরতে বিলম্ব হয় না। বর্তমানের চেয়ে অতীতের ঐতিহ্যের দিকেই তাঁর দৃষ্টি অধিকতর জাগ্রত, কেবল তাঁর কেন, প্রাচ্য চিত্রকলার অধিকাংশ শিল্পী সম্বন্ধেই এ কথা বলা যায়।
প্রাচ্য চিত্রকলাপদ্ধতিকে আজকাল ইংরেজীতে “বেঙ্গল স্কুল” ব’লে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বেঙ্গল স্কুলের নাম শুনলেই কতিপয় অবাঙালী শিল্প-সমালোচকের মাথা গরম হ’তে শুরু করে। সম্প্রতি পত্রান্তরে শ্রীরমণ নামে এক দক্ষিণী ভদ্রলোক ফতোয়া দিয়েছেনঃ “তথাকথিত বেঙ্গল স্কুলের প্রতিষ্ঠা বাংলা দেশেই হয়েছিল বটে, কিন্তু তার শিল্পীদের সকলেই বাংলা দেশের লোক নন।” এই অর্থহীন উক্তির দ্বারা ভদ্রলোক কি বোঝাতে চেয়েছেন, বুঝতে পারি নি। বেঙ্গল স্কুলের শিল্পীরা বাংলা দেশের ভিতরেই থাকুন আর বাইরেই থাকুন কিংবা তাঁরা জাতে অবাঙালী হোন, তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ তাঁদের একই গোষ্ঠীভুক্ত ব’লেই মনে করতে হবে। তাঁরা একই আদর্শে অনুপ্রাণিত, একই সাধনমন্ত্রে দীক্ষিত। এই
১০০