ধারা চ’লে আসছে বেঙ্গল স্কুলের জন্মের পর থেকেই। অবনীন্দ্রনাথের কাছে মানুষ হয়েছিলেন যে সব শিল্পী, তাঁদের মধ্যে ছিলেন অবাঙালীও। অবনীন্দ্রনাথের শিষ্যরাও (নন্দলাল বসু, অসিতকুমার হালদার, সমরেন্দ্রনাথ গুপ্ত, মুকুল দে ও দেবীপ্রসাদ রায় চৌধুরী প্রভৃতি) বাংলা দেশের ভিতরে এবং বাহিরে নানা চিত্রবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আরো কত অবাঙালী ছাত্রকে তৈরি ক’রে তুলেছেন, তার সংখ্যা আমার জানা নেই। কিন্তু তাঁরা বাংলা দেশের বাইরেই থাকুন, কিংবা অবাঙালীই হউন, তাঁদেরও বলতে হবে বেঙ্গল স্কুলের শিল্পীই। “বেঙ্গল স্কুল প্রাদেশিক নয়, জাতীয় স্কুল।” শ্রীরমণের এ উক্তির মধ্যে নেই কিছুমাত্র নূতনত্ব, কারণ এটাও সর্বসম্মত। বেঙ্গল স্কুল ভারতের সর্বত্র যে জাতীয় শিল্পের বীজ ছড়িয়ে দিয়েছে, তারই ফলভোগ করছি আমরা সকলে জাতিধর্ম নির্বিশেষে।
শ্রীরমণ আরো বলেন, বাংলা চিত্রকলা (অর্থাৎ বেঙ্গল স্কুল) আজ নাকি বন্ধ্যা, তার অবস্থা বদ্ধ জলাশয়ের মত। আমার মতে এখনো একথা বলবার সময় হয়নি, কারণ এখনো নন্দলাল, অসিতকুমার ও দেবীপ্রসাদ প্রভৃতি শিল্পীরা তুলিকা ত্যাগ করেন নি, যদিও এ সত্য অস্বীকার্য নয় যে তাঁদের শিষ্য-প্রশিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন খেয়ালের মাথায় বিপথে গিয়ে আবার নব নব উদ্ভট পাশ্চাত্য “ইজ্মে”র মোহে আচ্ছন্ন হ’তে চাইছেন। কিন্তু তাঁদের নাম বেঙ্গল স্কুলের অন্তর্গত করা যায় না এবং তাঁদের কেউ যদি এখানে শিক্ষালাভ ক’রেও থাকেন, তবে আজ তাঁকে বলতে হবে, বেঙ্গল স্কুলের নাম- কাটা ছেলে।
আর এক কথা। সকল আর্টের ক্ষেত্রেই যুগে যুগে বদলে যায় পদ্ধতির পর পদ্ধতি। চিত্রকলাতেও প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত কত পদ্ধতির জন্ম ও প্রাধান্য হয়েছে তা বর্ণনা করতে গেলে আর একটি স্বতন্ত্র ও বৃহৎ প্রবন্ধ রচনা করতে হয়। কিন্তু কোন পদ্ধতিই ব্যর্থ হয়নি। ইমপ্রেসানিজম্ বা কিউবিজম্ প্রভৃতি আসরে দেখা দিয়েছে ব’লে কি রাফায়েল, মিকেলাঞ্জেলো ও দ্য ভিঞ্চি প্রভৃতির প্রতিভা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে? “বাংলা চিত্রকলা আজ বন্ধ্যা”, একথা বলা বিমূঢ়তা। আজ তা সুফলাই হোক আর অফলাই হোক, তার
১০১