পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

গৌরব অক্ষয় হয়েই থাকবে। মতিভ্রান্ত ভারতীয় চিত্রকলার দৃষ্টিকে সে ঘরমুখো করতে পেরেছে, এই তার প্রধান গৌরব। প্রথম জাগরণের সঙ্গে সঙ্গেই সে একদল শক্তিশালী, সৃষ্টিক্ষম শিল্পী গঠন করতে পেরেছে, এই তার আর এক গৌরব। তারপর ভারতের দিকে দিকে প্রত্যন্তপ্রদেশ পর্যন্ত আজ সে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, এই তার আরো একটি গৌরব। এই সব কারণে বাংলা চিত্রকলাপদ্ধতি চিরদিনই অতুলনীয় হয়ে থাকবে।

 বাংলা চিত্রকলার নবজাগরণের যুগে যে কয়েকজন শিল্পী অগ্রনেতারূপে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, অসিতকুমার হচ্ছেন তাঁদেরই অন্যতম। কিন্তু তাঁর হাতে কেবল তুলিই চলে না, কলমও চলে অবাধগতিতে। তাঁর গদ্যও আসে, পদ্যও আসে। অল্পদিন হ’ল তিনি কালিদাসের “মেঘদূত” ও “ঋতুসংহার”-এর সচিত্র কাব্যানুবাদ প্রকাশ করেছেন—একাধারে দেখেছি তাঁর কবি ও চিত্রকর রূপ। সুমিষ্ট কবিতা, বিচিত্র চিত্র। এত ভালো লেগেছিল যে, “দৈনিক বসুমতী”তে সুদীর্ঘ সমালোচনার দ্বারা তাঁকে করেছিলুম অভিনন্দিত। কিন্তু চিত্রবিদ্যালয়ের গুরুতর কর্তব্যভার নিয়ে তাঁকে নিযুক্ত হয়ে থাকতে হয়, ইচ্ছামত সাহিত্যচর্চার অবকাশ তিনি পান না। তাই দুঃখ ক’রে আমাকে লিখেছিলেনঃ “সময় আমার বড়ই কম, তাই সাহিত্যচর্চার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তবু চিরকালের অভ্যাস কি ছাড়া যায়? তাই কখনো-সখনো বেরিয়ে পড়ে এক-আধটা লেখা।”

 তাঁর সাকিন লক্ষ্নৌ, আমি আসীন কলকাতায়। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ কেটে গেছে, তাঁর সঙ্গে আর দেখা হয়নি। কালে-ভদ্রে হয়েছে পত্রালাপ। একখানি পত্রে তিনি আশা দিয়েছিলেন: “এবার কলকাতায় গেলে তোমার সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ ছাড়ব না।”

 শুনলুম, একদিন তিনি দেখা করতে এসেও ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমি তখন বাড়ির বাইরে। দেখা হয়নি।

 তার কয়েক বৎসর পরে প্রখ্যাত প্রমোদ-পরিবেশক স্বর্গীয় হরেন ঘোষের আস্তানায় অভাবিতভাবে হঠাৎ তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে

১০২