তো দেখতে পাই, কিন্তু তাঁরা কাজের কথা বলেন, বড় জোর দুটো গালগল্প করেন, তারপর উঠে চ’লে যান। কোন বিষয় নিয়ে উচ্চতর আলোচনা করবার ইচ্ছা বা সুযোগ সেখানে নেই।
কলকাতার সর্বশেষের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য-বৈঠক বসত “কল্লোল” কার্যালয়ে, যেখানে গিয়ে মন ও হাত পাকিয়েছেন শ্রীপ্রেমেন্দ্র মিত্র, শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও শ্রীবুদ্ধদেব বসু প্রভৃতি। “ভারতী” ও “কল্লোল” প্রভৃতি পত্রিকা এক এক দল শক্তিশালী ও নিজস্ব নূতন লেখক গঠন করেছিল। কিন্তু তারপর আর কোন পত্রিকার এমন সৌভাগ্য হয়েছে ব’লে মনে হয় না।
আমার বিশ্বাস, এরও অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে উপযোগী সাহিত্য-বৈঠকের অভাব। এক এক কাগজের সম্পাদক বা প্রধান লেখক যদি বেছে বেছে কয়েকজন আশাপ্রদ নূতন সাহিত্যযশাকাঙ্ক্ষী নির্বাচন ক’রে একটি গোষ্ঠী গঠন করেন এবং নিয়মিতভাবে তাঁদের বৈঠকে আহ্বান ক’রে খানিকটা ক’রে সময় সাহিত্য ও আর্ট নিয়ে আলোচনায় নিযুক্ত থাকতে পারেন, তাহ’লে নিশ্চয়ই সত্যিকার সাহিত্যিক তৈরি ক’রে তোলা যায়। অবশ্য এ-রকম প্রচেষ্টার সাফল্য নির্ভর করে প্রধান বৈঠকধারীর ব্যক্তিত্ব, ধৈর্য ও অভিজ্ঞতার উপরেই।
এই লেখক তৈরির চেষ্টা ও গুরুগিরির প্রথা বাংলা সাহিত্যের প্রথম স্বর্গ থেকেই দেখা যায়। ইংরেজ আমলে নতুন বাংলার প্রধান ও প্রথম কবিগুরু ছিলেন “সংবাদ প্রভাকর” সম্পাদক ঈশ্বর গুপ্ত। তাঁর পত্রিকার কার্যালয় রীতিমত সাহিত্যের পাঠশালায় পরিণত হয়েছিল। সে যুগের নূতন লেখকরা তাঁর দিকে আকৃষ্ট না হয়ে পারতেন না,—এমনি ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাব। নূতন লেখকদের উপদেশ দেবার জন্যে তিনি তাঁদের বাড়ীতেও গিয়ে হাজির হ’তেন। বঙ্কিম-সহোদর স্বর্গীয় পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখে শুনেছি, ঈশ্বর গুপ্ত প্রায়ই কাঁটালপাড়ায় গিয়ে তরুণ বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতেন। বঙ্কিমচন্দ্র নিজের মুখেই বলেছেনঃ “আর ঈশ্বর গুপ্তের নিজের কীর্তি ছাড়া প্রভাকরের শিক্ষানবীশদের একটা কীর্তি আছে। দেশের অনেকগুলি লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক প্রভাকরের শিক্ষানবীশ ছিলেন। বাবু রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় একজন। বাবু
৷৹