বসতেন, আর আমি গাইতুম গান। সেই কাঁচা বয়সে জীবনে ছিল না কোন কাজেরই ঝুঁকি, তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় শুধু অকারণ পুলকেই গাইতে পারত প্রাণ ক্ষণিকের গান ক্ষণিক দিনের আলোকে। সেদিন আর ফিরে আসবে না; মানষের জীবন,সাহিত্য ও চারুকলাও হয়েছে এখন বস্তুতন্ত্রী।
অনেকে অকালে ঝ'রে পড়েছেন এবং অনেকের প্রেরণা অল্পদিনেই ফরিয়ে গিয়েছে বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও যে সময়ের কথা বললুম, বাংলা সাহিত্যের দরবারকে তখন মুখরিত ক’রে তুলেছিল বহ কবির কলকণ্ঠ। রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল, গোবিন্দচন্দ্র দাস ও রজনীকান্ত সেন প্রভৃতি অগ্রজগণ বিরাজমান ছিলেন সগৌরবে। উদীয়মান কবিরূপে প্রশস্তি অর্জন করেছেন যতীন্দ্রমোহন বাগচী, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীকুমুদরঞ্জন মল্লিক প্রভৃতি।কয়েকজন মহিলা কবিও তখন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন— যেমন কামিনী রায়, স্বর্ণকুমারী দেবী, সরোজকুমারী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, মানকুমারী দাসী প্রভৃতি। 'মাইনর’ কবিরূপে সুপরিচিত ছিলেন রমণীমোহন ঘোষ, বরদাচরণ মিত্র ও রসময় লাহা প্রভৃতি।
কাব্যজগৎ যখন সরগরম, তখন তাঁদের পরে দেখা দেন শ্রীকালিদাস রায়। বহু পত্রিকার পাতা ওল্টালেই দেখতে পেতুম এই তিনজন কবির কবিতা—জীবেন্দ্রকুমার দত্ত, শ্রীকুমুদরঞ্জন মল্লিক ও শ্রীকালিদাস রায়।
আজকের পাঠকরা জীবেন্দ্রকুমারকে জানে না। তার দেশ ছিল চট্টগ্রামে। কলকাতার সাহিত্য-পরিষদ–ভবনে একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি ছিলেন পঙ্গু, পদযুগল ব্যবহার করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর সাহিত্যশ্রম ছিল অশ্রান্ত। বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে তাঁর রাশি রাশি রচনা পড়ুয়াদের সামনে এসে হাজির হ’ত। কাব্যকুঞ্জে বাস ক’রেই বোধ হয় তিনি নিজের পঙ্গু দেহের দুঃখ ভুলতে চাইতেন। “নির্মাল্য”, “তপোবন” ও
১০৬