প্রকাশিত তাঁর সাহিত্যনিবন্ধগুলি আমি প’ড়ে দেখেছি। সেগুলি সুখপাঠ্য রচনা।
তিনি নিজেও শিক্ষাব্রতী। স্কুলপাঠ্য পুস্তক লিখে অর্থ পাওয়া যায়, জীবনধারণের জন্যে যা অত্যন্ত দরকার। কবিতা যশ দিতে পারে, কিন্তু বিত্ত দেবার শক্তি থেকে সে বঞ্চিত। সংসারী হয়ে জীবনের উত্তরার্ধে এই সত্যটা উপলব্ধি ক’রেই হয়তো কবিতার ঝোঁক কমে গিয়েছে কালিদাসের।
হয় “যমুনা”, নয় “মর্মবাণী” কার্যালয়ে বসে আমি একদিন কবি করুণানিধানের সঙ্গে বাক্যালাপ করছিলাম। এমন সময়ে একটি যুবক ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। দোহারা চেহারা, মুখখানি হাসি-হাসি, কিন্তু সর্বাগ্রে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় তার ঘনকৃষ্ণ বর্ণের দিকে। তিনি হেঁট হয়ে পায়ের ধূলো নিয়ে করুণানিধানকে প্রণাম করলেন।
করুণানিধান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ইনি কবি কালিদাস রায়।”
মনে মনে ভাবলাম, পুত্রের বর্ণ দেখেই পিতা বোধ হয় নামকরণ করেছিলেন অনেকের মত কানা ছেলেকে পদ্মলোচন ব’লে মনকে দিতে চান নি প্রবোধ।
তারপর জেনেছিলুম কালিদাস কালো চামড়ার তলায় ঢেকে রেখেছেন নিজের পরম শুভ্র ও শুদ্ধ চিত্তটিকে। দলাদলির ধার ধারেন না, বড় বড় সাহিত্যবৈঠকেও তাঁকে দেখেছি ব’লে মনে পড়ে না। জনতা থেকে দূরে একান্তে থাকতেই ভালোবাসতেন। প্রাণ খুলে সমসাময়িকদের প্রশংসা করতে পারেন। যখন আমার “যৌবনের গান” নামে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল, তখন তাঁর সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাৎ হ'ত না বললেই চলে এবং এখনো তাঁর দেখা পাই কালেভদ্রে এখানে ওখানে। হঠাৎ একদিন সবিস্ময়ে দেখলুম, একখানি পত্রিকায় “যৌবনের গানে”র উপরে কালিদাসের লেখা একটি প্রশস্তিপূর্ণ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।
কালিদাস কবিতার বই প্রকাশ করেছেন অনেকগুলি—যেমন “কুন্দ”, “পর্ণপুট”, “বল্লরী”, “রসকদম্ব”, “ব্রজবেণু”, “লাজাঞ্জলি”,
১০৮