তেরো
যতীন্দ্র গুহ (গোবরবাবু)
স্বর্গীয় বন্ধুবর নরেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন একজন ধনী ও সুরসিক ব্যক্তি। তাঁর বসতবাড়ি ছিল মসজিদবাড়ি স্ট্রীটে পূর্বদিকের প্রায় শেষ প্রান্তে। সেইখানে প্রায়ই—বিশেষ ক’রে প্রতি শনিবারে হ’ত বন্ধু-সম্মিলন। যাঁরা উপস্থিত থাকতেন তাঁদের মধ্যে বেশীর ভাগই ছিলেন নবীন ও উদীয়মান ব্যারিস্টার। অন্যান্য শ্রেণীর লোকেরও অভাব ছিল না। নরেনবাবুর সাহিত্যবোধও ছিল, তাই একাধিক সাহিত্যিকও যেতেন তাঁর বৈঠকে। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছি আমি। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক স্বর্গীয় রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃহৎ গ্রন্থ “বাঙ্গলার ইতিহাস” প্রকাশিত হয়েছিল নরেনবাবুদেরই অর্থানুকূল্যে।
একদিন সেই বৈঠকে গিয়ে দেখলুম এক অসাধারণ মূর্তি। বিপুলবপু—যেমন লম্বায়, তেমনি চওড়ায়। দেখলেই বোঝা যায়, বিষম জোয়ান তিনি। তাঁর সর্বাঙ্গ দিয়ে ফুটে বেরুচ্ছে অমিতশক্তির প্রত্যেকটি লক্ষণ। বাঙালীদের মধ্যে তেমন চেহারা দুর্লভ।
জিজ্ঞাসা ক’রে জানলুম, তিনি হচ্ছেন নরেনবাবুর আত্মীয় পালোয়ান গোবরবাবু।
গোবরবাবু। তার আগেই তাঁর নাম এর-তার মুখে কিছু কিছু শুনতে পেতুম বটে, কিন্তু সে বিশেষ কিছুই নয়। যেখানে বৃহৎ বৃক্ষের অভাব সেখানে লোকে মস্ত ব’লে ধ’রে নেয় এরণ্ডকেই। কবি বলেছেন, “অন্নপায়ী বঙ্গবাসী স্তন্যপায়ী জীব।” এদেশে তখন কেউ আখড়ায় গিয়ে মাসকয়েক কুস্তি লড়লেই পালোয়ান ব’লে নাম কিনে ফেলত। কিন্তু গোবরবাবু যখন তরুণ (প্রায় বালক) বয়সে দ্বিতীয়বার ইংলণ্ডে যান, তখন তিনি সেখানকার সর্বশ্রেষ্ঠ মল্লদের সগর্বে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করেছিলেন এবং তাঁর কীর্তিকাহিনী প্রকাশিত হয়েছিল “প্রবাসী” পত্রিকায়।
১১২