প্রথমে তাঁর সঙ্গে শক্তিপরীক্ষা করে স্কটল্যাণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ কুস্তিগীর ক্যাম্পবেল। তাকে হার মানতে হ’ল গোবরবাবুর কাছে। তারপর তাঁর সঙ্গে লড়তে আসে জিমি ইসেন। বেজায় তার খাতির, কারণ সে ছিল সমগ্র বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জের চ্যাম্পিয়ন—অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ বাহাদুর মল্ল। ইংরেজরা মনে মনে ঠিক দিয়ে রেখেছিল যে, এই ছোকরা কালা আদমি তাদের সেরা পালোয়ানের পাল্লায় প’ড়ে নাস্তানাবুদ ও হেরে ভূত হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়ালো অন্যরকম। খানিকক্ষণ ধস্তাধস্তির পরেই ইসেন বুঝতে পারলে, গোবরবাবুর কাছে সে নিজেই ক্রমেই কাবু হয়ে পড়ছে। তখন নাচার হয়ে, অন্যায় উপায়ের দ্বারা নিজের মান বাঁচাবার জন্যে সে কুস্তি ছেড়ে বক্সিংয়ের প্যাঁচ কষলে—অর্থাৎ গোবরবাবুকে করলে মুষ্ট্যাঘাত। কিন্তু নাছোড়বান্দা গোবরবাবু কুস্তির প্যাঁচেই তাকে করলেন কুপোকাত। “দুর্বল” ব’লে কীর্তিত বাঙালীর ছেলে হ’ল ইংলণ্ডের সর্বজয়ী মল্ল!
“প্রবাসী” পত্রিকায় এই অভাবিত “রোমান্সের” কাহিনী পাঠ করবার পর থেকেই আমি হয়ে পড়েছিলুম গোবরবাবুর একান্ত ভক্ত। সাহিত্যে ও ললিতকলায় কোনদিনই বাঙালীর সাধুবাদের অভাব হয়নি। কিন্তু মল্লযুদ্ধেও বাঙালী যে বলদর্পিত ইংরেজদের গর্ব খর্ব করতে পারবে, সেদিন পর্যন্ত এটা ছিল একেবারেই কল্পনাতীত। কিন্তু তখনও আমাদের মন ছিল এমন চেতনাহীন যে বৃটিশ-সিংহের ঘরে গিয়ে তাকে লাঞ্ছিত ও পরাজিত ক’রে প্রথম বাঙালীর ছেলে যেদিন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন, সেদিন পুষ্পমাল্য, পতাকা নিয়ে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা করবার কথা কারুর মনেই উদয় হয়নি। বোধ হয় আমরা ভাবতুম, পালোয়ান উচ্চশ্রেণীর মানুষ ব’লেই গণ্য হ’তে পারে না। আজও কি জাগ্রত হয়েছে আমাদের চেতনা? কত দিকে কত সফরী স্বল্পজলে লাফঝাঁপ মেরে এখানে জনসাধারণের দ্বারা অভিনন্দিত হচ্ছে, কিন্তু য়ুরোপ-আমেরিকার প্রথম দিগ্বিজয়ী বাঙালী যোদ্ধাকে তাঁর স্বদেশ আজ পর্যন্ত দিয়েছে কি কোন অভিনন্দন?
১১৩