ইমামবক্স য়ুরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ পালোয়ানদের অনায়াসেই ভূমিসাৎ ক’রে অজেয় নাম কিনে দেশে ফিরে আসেন। সেই-ই প্রথম য়ুরোপে ভারতীয় পালোয়ানদের জয়যাত্রার সূত্রপাত।
মল্লযুদ্ধের দিকে গোবরবাবুদের প্রবৃত্তি হয়েছিল সহজাতসংস্কারের জন্যেই। বাংলা দেশে এই পুরুষোচিত ক্রীড়ার চর্চা চ’লে আসছে তাঁদের পরিবারে বহুকাল থেকেই। তাঁর পিতামহ অম্বুবাবু ও ক্ষেতুবাবু প্রভূত অর্থের মালিক হয়েও সাধারণ নিষ্কর্মা ধনীদের মত কমলবিলাসীর জীবনযাপন করতেন না। মুক্তকচ্ছ হয়ে বৈষ্ণবী মায়া নিয়ে তাঁরা মেতে থাকেননি, শক্তিমন্ত্রে দীক্ষা পেয়ে তাঁরা হয়েছিলেন বীরাচারী শক্তিসাধক। বাড়ীতেই ছিল তাঁদের বিখ্যাত কুস্তির আস্তানা, সেখানকার মাটি গায়ে মাখেননি, ভারতের প্রথম শ্রেণীর পালোয়ানদের মধ্যে এমন লোকের সংখ্যা বেশী নয়। এবং অম্বুবাবু ও ক্ষেতুবাবু নিজেরাও ছিলেন প্রখ্যাত কুস্তিগীর, তাঁদের নাম ফিরত লোকের মুখে মুখে। কেবল বাংলা দেশে নয়, বাংলার বাইরেও। গোবরবাবুদের পিতৃদেবকেও আমি দেখেছি। তিনিও কুস্তি লড়তেন কিনা ঠিক জানি না, কিন্তু খুব সম্ভব লড়তেন। কারণ দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে তিনিও ছিলেন বিশালকায়। এমন বলী বংশে জন্মগ্রহণ করলে যোদ্ধা না হওয়াই অস্বাভাবিক।
ধীরে ধীরে গোবরবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ জ’মে উঠতে লাগল। এবং ধীরে ধীরে আমার সামনে খুলে যেতে লাগল তাঁর প্রকৃতির নূতন নূতন দিক। সাধারণতঃ লোকের বিশ্বাস, পালোয়ানরা কেবল কুস্তি লড়ে, মুগুর ভাঁজে ও ডন-বৈঠক দেয় এবং অবসরকালে ভোম হয়ে থাকে ভাঙের নেশায়। জানি না গোবরবাবু বাঙালী ব’লেই এটা সম্ভবপর হয়েছে কি না, কিন্তু তাঁকে দেখে বুঝলুম, পালোয়ানকুলেও প্রহ্লাদ জন্মায়।
নরেনবাবুর বাড়ীতে কেবল গালগল্পের মজলিস বসত না। প্রতি শনিবারে সেখানে নাতিবৃহৎ মাইফেলের আয়োজন হ’ত এবং প্রতি শনিবারের সন্ধ্যায় কেবল নামজাদা স্থানীয় শিল্পীরা নন, বাংলার বাইরেকার ভারতবিখ্যাত গাইয়ে-বাজিয়েও এসে আসরে আসীন হতেন। এমন দিন ছিল না, গোবরবাবু যেদিন সেখানে
১১৫