পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইয়াঙ্কিস্থানে বাঙালী মল্ল

বুদ্ধিমান যোদ্ধারা ঐ কুস্তি বা মুষ্টিষদ্ধের প্রদর্শনীতে প্রতিপক্ষের শক্তির মাত্রা কতকটা আন্দাজ ক’রে নিতে পারেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ সালিভান ও কর্বেটের বিখ্যাত মুষ্টিযুদ্ধের উল্লেখ করা যায়। মুষ্টিযুদ্ধের ক্ষেত্রে জন এল সালিভান যখন অদ্বিতীয় এবং কারুর কাছে কখনো পরাজিত হন নি, সেই সময়ে উদীয়মান যোদ্ধা জেমস জে কর্বেটের সঙ্গে তাঁর প্রদর্শনী-যুদ্ধের ব্যবস্থা হয়। কর্বেট তার আগেই একজন সাধারণ যোদ্ধার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু আমেরিকায় তাঁকেই হেভী ওয়েটে সবচেয়ে চতুর যোদ্ধা ব’লে স্বীকার করা হয়। প্রদর্শনী-যুদ্ধে সালিভানের সঙ্গে মাত্র চার রাউণ্ড ল’ড়েই কর্বেট তাঁর শক্তির পরিমাণ সম্বন্ধে একটা মোটামুটি আন্দাজ ক’রে নিয়ে পর বৎসরেই (১৮৯২) তাঁকে প্রতিযোগিতায় আহ্বান করেন এবং যুদ্ধে জয়ী হয়ে “পৃথিবীজেতা” নাম কেনেন।

 সূতরাং প্রথম শ্রেণীর নামজাদা ভারতীয় পালোয়ানদের সঙ্গে বারংবার ধস্তাধস্তি করে গোবরবাবুও যে তাঁদের শক্তির পরিমাপ সম্বন্ধে একটা ধারণা করতে পেরেছিলেন, একথা অনায়াসেই অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু তবু তিনি এদেশী পালোয়ানদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কুস্তি না ল’ড়ে বার বার পাশ্চাত্য দেশে গিয়েছেন, সেখানে প্রতিষ্ঠিত করতে ভারতের বিজয়গৌরব। প্রথমবার তিনি গামা ও ইমামবক্স প্রভৃতিকে নিয়ে ইংলণ্ডে গিয়ে সেখানে তাঁদের প্রতিষ্ঠা বাড়িয়ে আসেন। দ্বিতীয়বার নিজেই গিয়ে ইংলণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ মল্লরূপে পরিচিত হন। তৃতীয়বার তিনি যান আমেরিকায় সর্বোচ্চ “পৃথিবীজেতা” উপাধি অর্জন করবার জন্যে।

 কিন্তু এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা সফল করবার জন্যে তাঁকে স্বীকার করতে হয়েছে অসামান্য কায়িক শ্রম। বৎসরের পর বৎসর ধ’রে তিনি শ্বেতাঙ্গ পালোয়ানের পর পালোয়ানকে ধরাশায়ী করেছেন। তাঁর তখনকার কথা নিয়ে আমি যথাসময়ে বাংলা পত্রিকায় আলোচনা করেছি। বাংলা কাগজওয়ালারা যা তা ব্যাপার নিয়ে প্রচুর আবোল তাবোল বকতে পারেন, কিন্তু বাঙালীর এই অতুলনীয় কীর্তি নিয়ে কেউ মাথা ঘামানো দরকার মনে করেন নি। গোবরবাবুর অবদান বাংলা দেশে প্রায় অবিখ্যাত হয়ে আছে। গামা মাত্র দুইজন শ্রেষ্ঠ শ্বেত

১২৫