ম্যাডানদের কর্মতৎপরতা বাংলা নাট্যকলার ধারাকে বাহিত করেছিল প্রশস্ততর নূতন এক খাতে। বর্তমান কালের নাট্যাচার্য শিশিরকুমার সাধারণ রঙ্গালয়ে যোগদান করেন তাঁদেরই আমন্ত্রণে এবং তাঁরাই এনেছিলেন নির্মলেন্দু লাহিড়ীকেও। সেই সময়ে ম্যাডানদের রঙ্গালয়ের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন প্রিয়বাবুই। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়।
প্রথম যেদিন তাঁকে দেখি, তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ করবার সুযোগ হয়নি। ১৯২২ খৃষ্টাব্দের কথা। শিশিরকুমার সাধারণ রঙ্গালয়ে আত্মপ্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই জনসাধারণের কাছ থেকে অতুলনীয় অভিনন্দন লাভ করলেন দেখে মিনার্ভা থিয়েটারের স্বত্বাধিকারী স্বর্গীয় বন্ধুবর উপেন্দ্রকুমার মিত্রও যুগোপযোগী কোন নূতন ও শক্তিশালী অভিনেতাকে নিজের সম্প্রদায়ভুক্ত করবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। সেই সময়ে সৌখীন নাট্যজগতে শ্রীনরেশচন্দ্র মিত্রের খুব ডাকনাম। আমি তখনও তাঁর অভিনয় দেখিনি বটে, কিন্তু কারুর কারুর মুখে শুনতুম, শিল্পী হিসাবে তিনি নাকি শিশিরকুমারেরও চেয়ে শ্রেষ্ঠ। উপেনবাবুর কানেও বোধ করি এমনি কোন কথা উঠেছিল। একদিন তিনি আমার বাড়ীতে এসে অনুরোধ করলেন, নরেশচন্দ্রকে মিনার্ভা থিয়েটারে নিয়ে আসবার জন্যে।
আমি তখন নরেশচন্দ্রকে চিনতুম না, তাই স্বর্গীয় নাট্যশিল্পী রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় নরেশচন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত হলুম এবং তাঁর কাছে উপস্থিত করলুম উপেনবাবুর প্রস্তাব। নরেশচন্দ্র তখনি রাজী হয়ে গেলেন।
কিন্তু ম্যাডানরা যে শিশিরকুমারের সঙ্গে নরেশচন্দ্রকেও নিজেদের দলে টানবার জন্যে চেষ্টা করছেন, তখন পর্যন্ত এ কথা আমি জানতুম না। যেদিন উপেনবাবুদের সঙ্গে নরেশচন্দ্রের বন্দোবস্ত পাকা হয়ে যাবার কথা, ঠিক সেইদিনই হস্তদন্তের মত প্রিয়বাবু মিনার্ভা থিয়েটারে এসে উপস্থিত। তিনি অনেক বোঝালেন, কিন্তু নরেশচন্দ্র কিছুতেই বোঝ মানলেন না। তিনি মিনার্ভা থিয়েটারেই যোগদান করলেন।
১৩৭