পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

এখনো তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালে মন হয়ে ওঠে শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ। সে হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক, সে হচ্ছে সমগ্র দেশের শিল্পী ও সাহিত্যিকগণের প্রধান তীর্থ।

 ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমাদের ধর্মে, আমাদের সমাজে, আমাদের জাতীয় জীবনে যাঁরা নতন রূপ ও নূতন আদর্শ এনেছেন, ঐখানেই তাঁরা প্রথম পৃথিবীর আলোক দেখেছেন, ঐখানেই তাঁরা লালিত-পালিত হয়েছেন এবং ঐখানেই তাঁরা দুনিয়ার পাট তুলে দিয়ে অন্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ঐ বাড়ীর ঘরে ঘরে দিকে দিকে ছড়ানো আছে অসাধারণ মানষদের পদরেণু।

 এইজন্যে বিদেশীরাও কলকাতায় এলে ঠাকুরবাড়ীতে আসবার প্রলোভন সংবরণ করতে পারতেন না। কেবল সাহিত্যক্ষেত্রে নয়, চিত্রকলার ক্ষেত্রেও আত্মপ্রকাশ করেছেন ঠাকুরবাড়ীর যতগুলি সন্তান, বাংলাদেশে আর কোন পরিবারে তা দেখা যায় না। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ ও সুনয়নী দেবী এবং এখনকার উদীয়মানদের মধ্যে সুভো ঠাকুর। যাঁরা ভিতরকার খবর রাখেন তাঁরাই জানেন, ঠাকুর পরিবারভুক্ত প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তিরই মধ্যে আছে সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি গভীর অনুরাগ। তাঁরা ইচ্ছা করলেই লেখক বা শিল্পী হ'তে পারতেন, কিন্তু যে কারণেই হোক তাঁদের সে ইচ্ছা হয়নি।

 নতুন বাংলার সঙ্গীতও জন্মলাভ করেছে ঠাকুরবাড়ীর মধ্যেই। বাঙালী হচ্ছে কাব্যপ্রিয় ভাবুক জাতি। গানে সুরের ঐশ্বর্যের সঙ্গে সে লাভ করতে চায় কথার সৌন্দর্যও। কথাকে নামমাত্র সার ক'রে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের লোকরা যখন সুর ও তালের 'ব্যাকরণ' নিয়ে তাল-ঠোকাঠুকি করছে, বাংলাদেশের লোকসাধারণ তখন একান্ত প্রাণে উপভোগ করছে রামপ্রসাদের গীতাবলী, বাউল-সঙ্গীত ও কীর্তনে বৈষ্ণব পদাবলী প্রভৃতি। যে সব গান সুরের সাহায্যে কথার ভাবকেই মর্যাদা দিতে চায়, আমাদের কাছে তাদেরই আদর বেশী। বাংলাদেশের মেঠো বা ভাটিয়ালী গানও কাব্যরসে বঞ্চিত নয়। নব্য বাংলার বিদ্বজ্জনদের চিত্ত পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভিন্নভাবাপন্ন হয়েছে বটে, কিন্তু তাঁদের মনের ভিতরেও স্বাভাবিক