সমগ্র “কর্ণার্জুন” পালায় “শকুনি”র উপরে টেক্কা মারতে পারেন নি আর কেউ।
তারপর নরেশচন্দ্র নানা রঙ্গালয়ে অভিনয় করেছেন অসংখ্য ভূমিকায়, এখানে তার ফর্দ দাখিল করবার জায়গা নেই। তাঁর মত চৌকস নটের সংখ্যা বেশী নয়। গম্ভীর, হাস্যরসাত্মক ও সিরিয়োকমিক” প্রভৃতি সকল শ্রেণীর ভূমিকাতেই তিনি অর্জন করেছেন অসামান্য কৃতিত্ব। তিনি যে গীতি-সংবলিত ভূমিকারও মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন, “পুণ্ডরীক” নাট্যাভিনয়ে সে প্রমাণও পাওয়া গিয়াছে। নবযুগের শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের মধ্যে এখন এক জহরলাল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া গান গাইবার শক্তি আর কারুর নেই। এ-শক্তি যাঁদের ছিল, তাঁরা এখন স্বর্গত কিংবা বিদায় নিয়েছেন রঙ্গালয় থেকে। যেমন তিনকড়ি চক্রবর্তী, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, বিশ্বনাথ ভাদুড়ী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও জীবন গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতি।
নরেশচন্দ্র কেবল নট নন, সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারেন নাট্যাচার্যের কর্তব্যও। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষালাভ ক’রে নাম কিনেছেন এ যুগের বহু নট-নটীই। আমি তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি দেখেছি। তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর শিক্ষক।
চলচ্চিত্র-জগতেও নট, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসাবে আছে তাঁর যথেষ্ট অবদান। কখনো অভিনেতা এবং কখনো পরিচালকরূপে তিনি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছেন একাধিকবার। তাঁর দ্বারা পরিচালিত “স্বয়ংসিদ্ধা” ও “কঙ্কাল” প্রভৃতি চিত্রের জনপ্রিয়তা স্মরণীয়।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। এক সময়ে বহু রাত্রির অধিকাংশ তাঁর সঙ্গে একত্রে যাপন করেছি। মধ্য রাত্রে রঙ্গালয়ে হ’ত যখন যবনিকাপাত, বসত তখন আমাদের বন্ধুসভা। সেখানে হাজির থাকতেন তিনি, রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায় এবং আরো কেউ কেউ। রসালাপে এবং গল্পগুজবে কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ভোরের পাখীর ঘুম ভাঙবার সময় যে এসেছে, কারুর থাকত না সে খেয়াল। মাঝে মাঝে সে আসরে এসে যোগ দিতেন শিশির-
১৪৬